ভুবনেশ্বর শিব মন্দির, উত্তর গোবিন্দনগর, দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
শ্যামল কুমার ঘোষ
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর ১ ব্লকের অধীন একটি গ্রাম উত্তর গোবিন্দপুর। পাঁশকুড়া-ঘাটাল বাস রাস্তার একটি স্টপেজ গৌরা। গৌরাতে নেমে পশ্চিম দিকে টোটোতে বা হেঁটে এই গ্রামে যাওয়া যায়। গ্রামের পাশ দিয়ে একটি খাল বয়ে গেছে। এই খালের পাশে ভুবনেশ্বর শিব মন্দির অবস্থিত। খালের অপর পাশে অবস্থিত গোবিন্দপুর গ্রামের রাধাগোবিন্দ ও রাধারমণ জিউর মন্দির।
অল্প উঁচু ভিত্তিবেদির উপর স্থাপিত, পশ্চিমমুখী মন্দিরটি আটচালা শৈলীর। মন্দিরের সামনে ত্রিখিলান প্রবেশপথবিশিষ্ট অলিন্দ। গর্ভগৃহে ঢোকার একটিই দরজা, সামনে। সামনের দেওয়ালের তিনটি খিলানের উপরে টেরাকোটার সুন্দর ফলক আছে। দুই প্রান্তের ও বাঁকানো কার্নিসের নিচের এক সারি কুলুঙ্গির মধ্যে টেরাকোটার ফলক থাকলেও এখন তার সবগুলিই ভগ্ন। খিলানের উপরের টেরাকোটার বিষয় : রামরাবণের যুদ্ধ, রাবণের সীতা হরণ, রামের কোলে লক্ষণ ও হনুমানের গন্ধমাদন পর্বত আনয়ন, রামরাজা, শিবের বিয়ে, সিংহল যাত্রা কালে ধনপতির কমলেকামিনীর পরিবর্ত হিসাবে গণেশজননীর দর্শন, অনন্তশয়ানে বিষ্ণু ইত্যাদি। মন্দিরে কয়েকটি মকর মূর্তি আছে। মন্দিরের সামনে একটি টিনের ছাউনি দেওয়া নাটমন্দির আছে যেটি মন্দিরের ছবি তোলার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করে। বাঁধ-রাস্তার মাটির জন্য মন্দিরের দক্ষিণ দিকটার অনেকটা আড়াল হয়ে গেছে।
মন্দিরের শীর্ষ চালার গায়ে একটি প্রতিষ্ঠাফলক আছে। প্রতিষ্ঠাফলকের পাঠ : " শ্রীশ্রী ভুবনেশ্বর / দেবাদিদেব মহাদেব / সকাব্দা ১৭৭২ সন ১২৫৭ সাল / তাং ১ ভাদ্র মিস্ত্রী শ্রী আনন্দরাম দাস সাকিম দাসপুর। " অর্থাৎ ১৮৫০ খ্রীষ্টাব্দে মন্দিরটি নির্মিত। প্রাতিষ্ঠাফলক থেকে মন্দিরের কারিগরের নাম জানা গেলেও প্রতিষ্ঠাতার নাম জানা যায় না।
মন্দিরটিতে এখন সংস্কারের কাজ হচ্ছে। সে কারণে গর্ভগৃহের শিবলিঙ্গটি অন্যত্র সরানো হয়েছে। মন্দিরটি পরিদর্শনের তারিখ : ১৭.১০.২০২২
|
সিংহল যাত্রা কালে ধনপতির কমলেকামিনীর পরিবর্ত হিসাবে গণেশজননীর দর্শন |
|
বাঁ দিকের খিলানের উপরের কাজ |
|
রামরাবণের যুদ্ধ |
|
রাবণের সীতাহরণ |
|
হনুমানের গন্ধমাদন পর্বত আনায়ন ও রামের কোলে লক্ষণ |
|
মাঝের খিলানের উপরের কাজ |
|
রামরাজা |
|
শিবের বিয়ে |
|
সিংহল যাত্রা কালে ধনপতির কমলেকামিনীর পরিবর্ত হিসাবে গণেশজননীর দর্শন
|
|
অনন্তশয়ানে বিষ্ণু |
|
ডান দিকের খিলানের উপরের কাজ |
|
মকর মূর্তি - ১ |
|
মকর মূর্তি - ২ |
|
প্রতিষ্ঠাফলক |
কী ভাবে যাবেন ?
হাওড়া থেকে মেদিনীপুর গামী ট্রেনে উঠে পাঁশকুড়া স্টেশনে নামুন। স্টেশনের কাছেই পাঁশকুড়া বাস স্ট্যান্ড। সেখান থেকে ঘাটাল গামী বাসে উঠে গৌরাতে নামুন। খালের উপর ব্রিজের পরে নামবেন। টোটোতে বা হেঁটে ( পশ্চিম দিকের ) এই গ্রামের মন্দিরে যাওয়া যায়।
সহায়ক গ্রন্থ :
১) পুরাকীর্তি সমীক্ষা - মেদিনীপুর : তারাপদ সাঁতরা
২) মেদিনীপুর জেলার প্রত্ন-সম্পদ : প্রণব রায়
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন