৫ টি চারচালা মন্দিরের গুচ্ছ, কালীতলার কাছে, গণপুর, বীরভূম
শ্যামল কুমার ঘোষ
বীরভূম জেলার মহম্মদ বাজার ব্লকের অন্তর্গত গণপুর একটি প্রাচীন গ্রাম। মল্লারপুরের নিকটবর্তী এই গ্রাম আগে বর্ধিষ্ণু ও সমৃদ্ধশালী ছিল। গ্রামটি এককালে দেশীয় প্রক্রিয়ায় আকরিক লোহা থেকে লোহা নিষ্কাশনের কেন্দ্র ছিল এবং গ্রামের চৌধুরী বংশ এই লোহার কারবারে বিত্তশালী হন ও প্রসিদ্ধি লাভ করেন। গণপুর গ্রামের পূর্বের প্রাচুর্য সেখানে প্রতিষ্ঠিত অসংখ্য মন্দির স্থাপনের মধ্যে প্রতিফলিত। এখানে গ্রামের কালীতলায় কাছে অবস্থিত ৫ টি চারচালা মন্দিরের গুচ্ছ সম্বন্ধে আলোচনা করবো।
একই সারিতে অবস্থিত ও সামান্য উঁচু ভিত্তিবেদির উপর স্থাপিত, দক্ষিণমুখী মন্দিরগুলি চারচালা শৈলীর। মন্দিরগুলির সামনের দেওয়ালে ফুলপাথরের উপর অলংকরণ আছে। ফুলপাথর খুব নরম প্রকৃতির পাথর। লালচে রং। এই পাথর রাত্রিতে জলে ভিজিয়ে রেখে সকালে ছেনি দিয়ে কুঁদে যে কোন অলংকরণ ফুটিয়ে তোলা যায়। এই পাথরের মধ্যে দানা না থাকার জন্য ফুলপাথরের উপর কাজ পোড়ামাটির কাজের মতোই হয়ে থাকে। ছবি দেখে দুটোর পার্থক্য করা শক্ত।
মন্দিরগুলি কোন সময়ে নির্মিত হয়েছিল তার কোন উল্লেখ নেই অর্থাৎ কোন প্রতিষ্ঠাফলক নেই। ফুলপাথরের ফলকে সজ্জিত মন্দিরের দেওয়ালে উৎকীর্ণ দৃশ্যাবলীর শিল্পশৈলী সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। দৃশ্যগুলির মধ্যে কৃষ্ণের জন্ম, দুঃশাসন কর্তৃক দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ এবং কৃষ্ণ কর্তৃক দ্রৌপদীকে রক্ষা, ষড়ভুজ কৃষ্ণ, ত্রিবিক্রম মূর্তি, নবনারীকুঞ্জর, রাসমণ্ডল ইত্যাদি পৌরাণিক কাহিনী উল্লেখযোগ্য। সামাজিক দৃশ্যাবলীর মধ্যে একটি চিত্রে দেখা যায় একজন ঢেঁকিতে পাড় দিচ্ছেন এবং একজন স্ত্রীলোক গর্তের মধ্যের ধানগুলো নেড়ে দিচ্ছেন। আর একটি চিত্রে দেখা যায় তিনটি লোক একটি পাথর বা কাঠের ব্লককে করাত দিয়ে কাটছেন। এ ছাড়া নানা রকম নকশা ও কয়েকটি কৌণিক ভাস্কর্যে Yali-ও আছে। দুটি মন্দিরে রং করা হয়েছে।
|
একটি মন্দিরের খিলানের উপরের কাজ
|
|
অপর একটি মন্দিরের খিলানের উপরের কাজ |
|
বড় করে |
|
বস্ত্রহরণ |
|
যুধিষ্ঠির ও শকুনির দ্যূতক্রীড়া |
|
দুঃশাসন কর্তৃক দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ এবং কৃষ্ণ কর্তৃক দ্রৌপদীকে রক্ষা |
|
আর একটি মন্দিরের খিলানের উপরের কাজ |
|
কৃষ্ণের জন্ম কাহিনী |
|
ষড়ভুজ কৃষ্ণ, ত্রিবিক্রম মূর্তি ইত্যাদি |
|
কৌণিক ভাস্কর্য ( Yali ) - ১ |
|
কৌণিক ভাস্কর্য ( Yali ) - ২
|
|
কৌণিক ভাস্কর্য ( Yali ) - ৩
|
|
কৌণিক ভাস্কর্য ( Yali ) - ৪
|
|
কুলুঙ্গির কাজ - ১ |
|
কুলুঙ্গির কাজ - ২ |
|
কুলুঙ্গির কাজ - ৩ |
|
কুলুঙ্গির কাজ - ৪ |
|
কুলুঙ্গির কাজ - ৫ |
|
কুলুঙ্গির কাজ - ৬ |
|
কুলুঙ্গির কাজ - ৭ ( রাধাকৃষ্ণের যুগ্ম মূর্তি ) |
|
নকশা - ১ |
|
নকশা - ২ |
|
নকশা - ৩ |
|
নকশা - ৪ |
|
নকশা - ৫ |
|
নকশা - ৬ |
|
নবনারীকুঞ্জর |
|
রাসমণ্ডল |
|
ঢেঁকিতে পাড় দিয়ে ধান ভানা |
|
পাথর বা কাঠের ব্লককে করাত দিয়ে চেরা |
কীভাবে যাবেন ? হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে রামপুরহাটগামী ট্রেনে মল্লারপুর স্টেশনে নেমে বাসে বা টোটোতে গণপুর যাওয়া যায়। অথবা সিউড়ি বা রামপুরহাট থেকে বাসে গণপুর। সেখান থেকে টোটোতে গণপুর কালীতলার মন্দির।
সহায়ক গ্রন্থ :
১) বীরভূম জেলার পুরাকীর্তি : দেবকুমার চক্রবর্তী
---------------------------
আমার ইমেল : shyamalfpb@gmail.com প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন