শ্রীধর জিউ ও ষড়ভুজ গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু মন্দির, আটচালা গোস্বামী বাড়ি, রবীন্দ্র সরণি, কুমারটুলি / বাগবাজার, কলকাতা
শ্যামল কুমার ঘোষ
কলকাতার কুমারটুলি / বাগবাজার অঞ্চলের ৫৬২/ই, রবীন্দ্র সরণিতে অবস্থিত শ্রীধর জিউ ও ষড়ভুজ গৌরাঙ্গ মন্দির।
অল্প উঁচু ভিত্তিবেদির উপর স্থাপিত, দক্ষিণমুখী, অলিন্দবিহীন মন্দিরটি সমতলছাদবিশিষ্ট একটি দালান শৈলীর মন্দির। ১৩৪৬ বঙ্গাব্দে ( ১৯৩৯ খ্রীষ্টাব্দে ) মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন নিতাই চন্দ্র গোস্বামীর পুত্র গোবর্দ্ধন গোস্বামী। এই গোবর্দ্ধন গোস্বামী ছিলেন নিত্যানন্দ প্রভুর বংশধর। গর্ভগৃহে একটি কাঠের সিংহাসনে শ্রীধর জিউ ( নারায়ণ শিলা ) ও ষড়ভুজ গৌরাঙ্গ বিগ্রহ নিত্য পূজিত।
বাংলার কিছু মন্দিরে ষড়ভুজ গৌরাঙ্গের দারুমূর্তি দেখা যায়। ষড়ভুজ গৌরাঙ্গ চৈতন্য মহাপ্রভুর একটি দিব্যরূপ। এই দিব্যরূপের মধ্যে শ্রীরামের ধনুর্বাণ, সন্যাসগ্রহণরূপী শ্রীচৈতন্যের দণ্ড ও কমণ্ডলু ও বংশীবাদনরত শ্রীকৃষ্ণের সমন্বয় ঘটেছে। এই দিব্যরূপটি চৈতন্যচরিতামৃত ও চৈতন্যভাগবত অনুযায়ী যথাক্রমে শ্রীবাস নবদ্বীপে এবং বাসুদেব সার্বভৌম নীলাচলে দর্শন করেছিলেন। ষড়ভুজ গৌরাঙ্গের এই দিব্যরূপ দর্শন দেওয়ার মধ্যে দিয়ে শ্রীচৈতন্য বোঝাতে চেয়েছেন যে শ্রীরাম, শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীগৌরাঙ্গ এক এবং অভিন্ন।
ষড়ভুজ গৌরাঙ্গের রূপ-বর্ণনা আমরা পাই, নরোত্তমের 'চৈতন্যমঙ্গলে' :
'হেনই সময়ে প্রভু ষড়ভুজ শরীর।
দেখি সার্বভৌম হইল আনন্দে অস্থির।।
উর্ধ্ব দুই হাতে ধরে ধনু আর শর।
মধ্যে দুই হাতে ধরে মুরলী অধর।।
নিম্ন দুই হাতে ধরে দণ্ড কমণ্ডল।
দেখি সার্বভৌম হইল আনন্দে বিহ্বল।।
অর্থাৎ, ষড়ভুজ গৌরাঙ্গের উপরের দুটি হাতে থাকে শ্রীরামচন্দ্রের ধনুর্বাণ, মাঝের দুটি হাত যেন শ্রীকৃষ্ণের বংশীবাদন রূপ ও নিচের দুটি হাতে ধরা থাকে সন্যাসগ্রহণকারী শ্রীচৈতন্যের দণ্ড ও কমণ্ডলু। আলোচ্য তিনটি দেবতার গাত্রবর্ণ যে রকম কল্পনা করা হয় ষড়ভুজ গৌরাঙ্গ মূর্তির হাতের বর্ণ সেই রঙের করা হয়।
মন্দিরটি পরিদর্শনের তারিখ : ১৭.১২.২০২১
ষড়ভুজ গৌরাঙ্গ বিগ্রহ |
মন্দিরের সামনের বিন্যাস |
গর্ভগৃহের সামনে |
শ্রীধর জিউ ও ষড়ভুজ গৌরাঙ্গ বিগ্রহ |
ষড়ভুজ গৌরাঙ্গ বিগ্রহ |
প্রতিষ্ঠাফলক |
শ্রীনিত্যানন্দ বংশ লিপি |
মন্দির-বাড়ির সামনের ফলক |
বড় রাস্তার উপরে লাগানো ফলক |
কী ভাবে যাবেন ?
কুমোরটুলি থেকে রবীন্দ্র সরণির ডান দিকের ফুটপাত ধরে বাগবাজারের দিকে হাঁটুন। ৫৫২, রবীন্দ্র সরণির একটি বাড়িতে এই মন্দিরের একটি ফলক লাগানো আছে। এখানে ডান দিকের গলিতে ঢুকে একটু এগুলেই বাঁ দিকে পড়বে ৫৬২/ই, রবীন্দ্র সরণিতে অবস্থিত আমাদের কাঙ্ক্ষিত মন্দির।
সহায়ক গ্রন্থ / প্রবন্ধ :
১) বাংলার মন্দির স্থাপত্য ও ভাস্কর্য : প্রণব রায়
২) মন্দির ভাস্কর্যে চৈতন্যলীলা : তারাপদ সাঁতরা
কলকাতার অন্যান্য মন্দির সম্বন্ধে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন / লিংকের উপর আঙুল দিয়ে টোকা দিন :
-------------------------------------------
--------------------------------------------
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন