ভবতারিণী কালী মন্দির, বলরাম ঘোষ স্ট্রিট, কলকাতা
শ্যামল কুমার ঘোষ
ভবতারিণী কালী মন্দির উত্তর কলকাতার শ্যামপুকুরের ২/২, বলরাম ঘোষ স্ট্রিটে অবস্থিত একটি প্রাচীন কালী মন্দির। ১২৯৫ বঙ্গাব্দের ( ১৮৮৮ খ্রীষ্টাব্দ ) ৫ই বৈশাখ মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। দিনটি ছিল বাসন্তী পঞ্চমী। প্রতিষ্ঠা করেন সারদা প্রসাদ ঘোষের মাতা দয়াময়ী দাসী।
উঁচু ভিত্তিবেদির স্থাপিত, ত্রিখিলান প্রবেশপথযুক্ত, দক্ষিণমুখী মন্দিরটি নবরত্ন শৈলীর। মন্দিরের খিলানের এক একটি স্তম্ভ 'কলাগেছ্যা' রীতির গোল ও সরু স্তম্ভগুচ্ছের সমষ্টি। গর্ভগৃহের সামনে ত্রিখিলান প্রবেশপথযুক্ত অলিন্দ। গর্ভগৃহে কষ্টিপাথরের দক্ষিণাকালী 'ভবতারিণী' নামে নিত্য পূজিতা। কালী মূর্তিটি ঘোমটা দেওয়া। তাই এঁকে অনেকে 'ঘোমটা কালী' বলে থাকেন। মন্দিরের গর্ভগৃহের একদিকে শ্রীধর ( নারায়ণ শিলা ), কৃষ্ণ-রাধিকা মূর্তি, একটি একক কৃষ্ণ মূর্তি ইত্যাদিও নিত্য পূজিত। বড় কৃষ্ণ-রাধিকা মূর্তিদ্বয় এই মন্দিরের পূর্বতন এক পুরোহিতের। মন্দিরের দুপাশে আছে দুটি আটচালা শিব মন্দির। দুটি মন্দিরের ভিতরে যথাক্রমে হরেশ্বর ও হরপ্রসন্ন নামে দুটি কষ্টিপাথরের শিবলিঙ্গ নিত্যপূজিত। তিনটি মন্দির একটি লম্বা বারান্দা দিয়ে যুক্ত। টানা বারান্দার সামনের দিকটা ও সিঁড়ি ঢালাই লোহার সুদৃশ্য রেলিং দিয়ে ঘেরা। তিনটি মন্দিরের চারিদিকে প্রদক্ষিণ করার প্রশস্ত জায়গা আছে। মন্দিরের সামনে একটি চাঁদনি আকৃতির নাটমন্দির আছে। মন্দিরটি পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। মন্দির প্রাঙ্গণের প্রবেশ-দ্বারের পাশে একটি প্রতিষ্ঠাফলক আছে। মন্দির প্রাঙ্গণ গাছের ছায়া-ঘেরা।
বলরাম ঘোষ ঢাকায় মুর্শিদকুলি খাঁর অধীনে চাকরি করতেন। কলকাতায় এসে শ্যামপুকুর অঞ্চলে জমি কিনে বাড়ি তৈরি করেন। তাঁর নামে রাস্তার নাম বলরাম ঘোষ স্ট্রিট। এই বংশের তুলসীরাম ঘোষ কর্মসূত্রে ঢাকায় থাকতেন। ঢাকায় নবাবের অধীনে উচ্চ পদে চাকরি করতেন। তুলসীরামের নাতি সারদাপ্রসাদ। তুলসীরাম স্বপ্নে এক কালী মূর্তি দেখেছিলেন। স্বপ্নে দেখা কালী মূর্তি অনুযায়ী তিনি একটি ছবি আঁকিয়েছিলেন। সেটি মন্দিরের গর্ভগৃহের দেওয়ালে টাঙানো আছে। স্বামীর মৃত্যুর পর তুলসীরামের পুত্রবধূ দয়াময়ী দেবী ছেলের সঙ্গে কলকাতায় ফিরে আসেন। এই জমি কিনে মন্দির তৈরি শুরু করেন এবং তুলসীরামের আঁকানো ছবি অনুযায়ী কালী মূর্তি তৈরি করান। কিন্তু তিনি মন্দির প্রতিষ্ঠা দেখে যেতে পারেন নি। তাঁর অবর্তমানে তাঁর পুত্র সারদাপ্রসাদ সেই কাজ সমাপন করেন।
বৈষ্ণব মতে পূজা হয়। নিত্য পূজা ছাড়াও কালী পূজার সময় ও বাসন্তী পঞ্চমীর দিন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ধুমধাম সহকারে মন্দিরে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি অমাবস্যায় হোম হয়। কালী পূজায় অন্নভোগ ও আমিষ ভোগ হয় না। নুন ছাড়া লুচি, পাঁচ রকমের ভাজা, বোঁদে, মিষ্টি ইত্যাদি দিয়ে ভোগ দেওয়া হয়। এছাড়া দুর্গা পূজাতে নবমীর দিন এক দিনের দুর্গা পূজা, জগদ্ধাত্রী পূজা, চাঁচর, জন্মাষ্টমী ইত্যাদি মন্দিরে অনুষ্ঠিত হয়। চার-পাঁচ জন সেবায়েত পালা করে মন্দিরে পূজা-কার্য করে থাকেন। মন্দিরের বর্তমান পুরোহিত রূপ মুখার্জী।
মন্দিরের ত্রিখিলান বিন্যাস |
ভবতারিণী মন্দির |
মন্দিরের সামনের রেলিং, বাঁ দিকে হরেশ্বর শিবমন্দির |
মন্দিরের শিখর |
দেওয়ালে টাঙানো কালীর ছবি |
ভবতারিণী কালী মূর্তি - ১ |
ভবতারিণী কালী মূর্তি - ২ |
শ্রীধর ( শালগ্রাম শিলা ) ও অন্যান্য বিগ্রহ |
হরেশ্বর শিবলিঙ্গ |
প্রতিষ্ঠাফলক |
*********
কলকাতার অন্যান্য মন্দির সম্বন্ধে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন / লিংকের উপর আঙুল দিয়ে টোকা দিন :
-------------------------------------------
--------------------------------------------
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন