প্রামাণিক কালী বাড়ি / ব্রহ্মময়ী কালী মন্দির, কুঠিঘাট, বরানগর, উত্তর ২৪ পরগনা
শ্যামল কুমার ঘোষ
ব্রহ্মময়ী কালী মন্দির বরাহনগরের কুঠিঘাট এলাকায় অবস্থিত একটি প্রাচীন কালী মন্দির। যদিও মন্দিরটি প্রামাণিক কালী বাড়ি নামেই বেশি পরিচিত। ১২৫৯ বঙ্গাব্দের ( ১৮৫৩ খ্রীষ্টাব্দ ) মাঘী পূর্ণিমার দিন মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠা করেন স্থানীয় দে প্রামাণিক পরিবারের দুই সদস্য দুর্গাপ্রসাদ দে প্রামাণিক ও রামগোপাল দে প্রামাণিক। সম্পর্কে তাঁরা কাকা-ভাইপো। মন্দিরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী দক্ষিণা কালী। শ্রীরামকৃষ্ণ এই মন্দিরে কয়েকবার এসেছেন। তিনি ব্রহ্মময়ী মাকে 'মাসি' বলে ডাকতেন। এখানে উল্লেখ্য, দক্ষিণেশ্বরের মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৫৫ খ্রীষ্টাব্দে। অর্থাৎ, দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরের দু' বছর আগে এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়।
উঁচু ভিত্তিবেদির স্থাপিত, ত্রিখিলান প্রবেশপথযুক্ত, দক্ষিণমুখী মন্দিরটি নবরত্ন শৈলীর। নবরত্নের শিখরগুলি রেখ ধরণের খাঁজ কাটা। মন্দিরের কার্নিস সোজা। মন্দিরের সামনে লোহার ফটক। এই ফটক দিয়ে ঢুকলে দুপাশে দুটি ছোট শিব মন্দির। আরও একটু সামনে দুপাশে পড়বে দুটি বড় শিব মন্দির। শিব মন্দিরগুলি আটচালা শৈলীর। প্রতিটি শিব মন্দিরে শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত। মন্দিরের সামনে একটি তুলসীমঞ্চ আছে।
মন্দিরের বিগ্রহ কষ্টিপাথরে নির্মিত। নির্মাণ করেন পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমার অন্তর্গত দাঁইহাটের নবীন ভাস্কর। তিনি তিনটি মায়ের মূর্তি নির্মাণ করেন। প্রথম মূর্তিটি শিবচন্দ্র গোহ ১২৫৭ বঙ্গাব্দে ( ১৮৫০ খ্রীষ্টাব্দে ) উত্তর কলকাতার হাতিবাগান অঞ্চলে তাঁদের পৈতৃক বাড়ির মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন। বাড়ির ঠিকানা ১১, বৃন্দাবন বসু লেন। এই বিগ্রহের নাম 'নিস্তারিণী'। দ্বিতীয় মূর্তিটি প্রতিষ্ঠিত হয় এই প্রামাণিক কালী বাড়িতে। বলা বাহুল্য, তৃতীয় মূর্তিটি মা ভবতারিনী রূপে প্রতিষ্ঠিত হয় দক্ষিণেশ্বরে।
মন্দিরে বর্তমানে দুজন পুরোহিত আছেন। সকালের জন্য সোমনাথ বড়াল ও সন্ধ্যায় থাকেন শম্ভুনাথ ব্যানার্জী। নিত্য পূজা ছাড়াও মাঘী পূর্ণিমার প্রতিষ্ঠা-তিথিতে ও দীপাবলী অমাবস্যায় বিশেষ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই মন্দিরের একটি প্রথা আছে। কালীপূজার দিন অমাবস্যা পড়ার পর পুরোহিত আগে দে প্রামাণিকদের কোন শরিকের বাড়িতে লক্ষ্মী পূজা করবেন, পরে তিনি মা ব্রহ্মাময়ী মন্দিরে এসে কালী পূজা করবেন। অর্থাৎ কালী পূজার রাতে মা ব্রহ্মময়ীর পূজার আগে লক্ষ্মী পূজা করা হয়। কালের নিয়মে মন্দিরে এখন পশুবলি হয় না। মন্দিরটি "শ্রীশ্রীব্রহ্মময়ী ট্রাস্ট " দ্বারা পরিচালিত হয়।
মন্দিরে প্রবেশ করে ডান দিকের দেওয়ালে তাকালে একটি শ্বেতপাথরের ফলক দেখা যায়। তাতে লেখা কিছু অংশ এখানে তুলে দিলাম :
"মোহন মূরতি মার যেন গো বালিকা।
ব্রহ্মময়ী নামে খ্যাত হইলা কালিকা।।
রাসমণির মা কালী, এই কালী মাতা।
এক ব্যক্তি উভয়ের আছিলা নির্মাতা।।
সুমিষ্ট মা, মাসী নাম দিলা সে কারণে।
প্রভু রামকৃষ্ণ ইহা শুনেছি শ্রবণে।।
নির্মাতা ও প্রতিষ্ঠাতা মহা ভাগ্যবান।
যাঁহাদের কীর্ত্তি হেরি তুষ্ট ভগবান।। "
কী ভাবে যাবেন ?
হাওড়া, শিয়ালদহ বা শ্যামবাজার থেকে বি. টি. রোড গামী বাসে উঠে সিঁথির মোড়ে নামুন। সেখান থেকে কুঠিঘাট গামী অটোতে উঠে কুঠিঘাটে নামুন। সেখান থেকে কাছেই মন্দির।
মন্দিরটি পরিদর্শনের তারিখ : ১৮.০৮.২০২১
প্রামাণিক কালী বাড়ি, কুঠিঘাট, বরানগর |
ব্রহ্মময়ী মা - ১ |
ব্রহ্মময়ী মা - ২ |
ব্রহ্মময়ী মা - ৩ |
সিংহাসনের উপরের অংশ |
মন্দিরের সামনে তুলসীমঞ্চ |
মন্দিরে লাগানো শ্বেতপাথরের ফলক |
ভালো কাজ।মায়ের আশীর্বাদে পূর্ণ হোক আপনার জীবন। জয় মা 🙏🏿
উত্তরমুছুন