পঞ্চরত্ন শ্যামরায় মন্দির, বিষ্ণুপুর,
বাঁকুড়া জেলা, পশ্চিম বঙ্গ
শ্যামল কুমার ঘোষ
পশ্চিমবঙ্গের যাবতীয় 'টেরাকোটা' মন্দিরের মধ্যে বিষ্ণুপুরের শ্যামরায় মন্দিরটি গঠনশৈলী, উন্নত পোড়ামাটির অলংকরণের অন্তহীন প্রাচুর্য ও উৎকর্ষতার জন্য এক বিশিষ্ট স্থানের অধিকারী। বর্গাকার ভিত্তিবেদির উপর প্রতিষ্ঠিত সম্পূর্ণ ইটের এই মন্দিরটি দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১১.৪ মিটার এবং উচ্চতায় ১০.৭ মিটার। দক্ষিণমুখী এই পঞ্চরত্ন মন্দিরটি স্থানীয়দের কাছে পাঁচচূড়া মন্দির নামে পরিচিত। মন্দিরের দক্ষিণ দেওয়ালে নিবদ্ধ চার লাইনের উৎসর্গলিপিটি : "শ্রীরাধিকাকৃষ্ণমুদে শকেঙ্কবে / দাঙ্কযুক্তে নবরত্নরত্নং / শ্রীবীর হম্বীর / নরেশ সূনুর্দদৌ নৃপ শ্রীরঘুনাথ / সিংহঃ।। মল্ল সকে ৯৪৯ । শ্রীরাজা বীর সিংহ।" অর্থাৎ, রাধাকৃষ্ণের আনন্দের জন্য নরেশ বীর হাম্বীরের পুত্র নৃপ রঘুনাথ সিংহ ৯৮৯ মল্লাব্দে ( ১৬৪৩ খ্রীস্টাব্দে ) এই নবরত্ন মন্দির দান করলেন। এখানে উল্লেখ্য, বঙ্গাব্দের চেয়ে মল্লাব্দ ১০১ বছর কম।
মন্দিরের চারপাশে ত্রিখিলান প্রবেশপথ বর্তমান। মন্দিরটির ভিতর ও বাহিরের দেওয়ালের সর্বাঙ্গে রয়েছে পোড়ামাটির অলংকরণ। রাধা-কৃষ্ণের আনন্দের জন্য প্রতিষ্ঠিত এ দেবালয়ে কৃষ্ণলীলা বা কৃষ্ণনামগানের দৃশ্যগুলি অগ্রাধিকার পেলেও সামাজিক, পৌরাণিক, রামায়ণ-মহাভারতের কাহিনী, শৈব অথবা শাক্ত উপাসনার সঙ্গে সম্পর্কিত, জ্যামিতিক ও ফুলকারি ভাস্কর্যও অজস্র ব্যবহৃত হয়েছে। আর আছে যুদ্ধ দৃশ্য। তবে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলা। আর একটা উল্লেখযোগ্য, এখানকার 'রাসমণ্ডল' ভাস্কর্য। তারাপদ সাঁতরা'র ভাষায় বলি, " পোড়ামাটির 'রাসমণ্ডল' ফলকের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন দেখা যায় সতেরো শতকের বিষ্ণুপুরের শ্যামরায় মন্দিরে। এ মন্দিরের দক্ষিণের দেওয়ালে যে দুটি বৃহদাকার রাসমণ্ডল দেখা যায় সেগুলি শুধু আকারেই সুবৃহৎ নয়, গঠন কৌশলের অভিনবত্বেও সমুজ্জল। এ ছাড়া এ মন্দিরের পুবের দেওয়ালেও রয়েছে এমন চারটি ছোটো আকারের রাসমণ্ডল। শুধু রাসমণ্ডল কেন, এ মন্দিরের প্রায় গোটা দেওয়াল জুড়েই উৎকীর্ণ হয়েছে রাসলীলা দৃশ্যাবলি।
আলোচ্য এ মন্দিরের রাসমণ্ডলের মধ্যবিন্দুতে রয়েছে কৃষ্ণসহ রাধা ও চন্দ্রাবলী আর তাদের বৃত্তাকার ভাবে ঘিরে অসংখ্য গোপাঙ্গনা হাত ধরাধরি ভঙ্গিতে নৃত্যরত। শুধু এখানেই শেষ নয়, এ বৃত্তের পরে আরও এক বৃত্ত রচিত হয়েছে যেখানে অসংখ্য গোপিনীদের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণ নৃত্যরত। এসব ভাস্কর্যফলকগুলির পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে কৃষ্ণ ও গোপিনীদের নৃত্যগীতের অসংখ্য ফলকচিত্র, যেখানে পাশাপাশি অগণিত মৃদঙ্গবাদক ও নর্তকীদের মূর্তিও উৎকীর্ণ। "
মন্দির-শিখরের কেন্দ্রীয় চূড়াটি আটকোণা। সংস্কারের জন্য সেটির অনেকটাই সিমেন্ট-পলস্তারাবৃত। কোণের চূড়াগুলি চারকোণা ও তাদের ছাদ উঁচুনিচু কার্নিসের বিন্যাসে কিছুটা পীঢ়া-দেউলের মত। মন্দিরে কোন বিগ্রহ নেই। মন্দিরটি 'ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ' - এর রক্ষণাধীন।
|
শ্যামরায় মন্দির, বিষ্ণুপুর |
|
মন্দিরের শিখর |
|
শিখরের বড় রত্নটির সামনের 'টেরাকোটা'র কাজ |
|
দক্ষিণ দিকের মাঝের খিলানের উপরের কাজ |
|
প্রতিষ্ঠাফলক |
|
দক্ষিণ দিকের একটি রাসমণ্ডল |
|
দক্ষিণ দিকের আর একটি রাসমণ্ডল |
|
পূর্ব দিকের বাঁ দিকের খিলানের উপরের কাজ |
|
পূর্ব দিকের মাঝের খিলানের উপরের কাজ |
|
পূর্ব দিকের ডান দিকের খিলানের উপরের কাজ |
|
পূর্ব দিকের দুটি রাসমণ্ডল |
|
পূর্ব দিকের অপর দুটি রাসমণ্ডল |
|
কৃষ্ণ-রাধিকা-চন্দ্রাবলী ও অন্যান্য গোপিনীরা |
|
কৃষ্ণলীলা - ১ |
|
কৃষ্ণলীলা - ২ |
|
কৃষ্ণলীলা - ৩ |
|
কৃষ্ণলীলা - ৪ |
|
কৃষ্ণলীলা - ৫ |
|
কৃষ্ণলীলা - ৬ |
|
কৃষ্ণলীলা - ৭ |
|
কৃষ্ণলীলা - ৮ |
|
কৃষ্ণলীলা - ৯ |
|
কৃষ্ণলীলা - ১০ |
|
যুদ্ধদৃশ্য - ১ |
|
যুদ্ধদৃশ্য - ২ |
|
যুদ্ধদৃশ্য - ৩ |
|
যুদ্ধদৃশ্য - ৪ |
|
যুদ্ধদৃশ্য - ৫ |
|
যুদ্ধদৃশ্য - ৬ |
|
যুদ্ধদৃশ্য - ৭ |
|
যুদ্ধদৃশ্য - ৮ |
|
একটি 'টেরাকোটা' চিত্র |
|
সেতু বন্ধন |
|
নর্তকী ও মৃদঙ্গবাদক |
|
নৃত্যরত গোপিনীরা |
|
বৃষবাহন |
|
দেবী কমলা |
|
নর্তকী ও মৃদঙ্গবাদক |
|
গন্ধবেরুন্ড ( Gandaberunda ) |
|
পৌরাণিক চিত্র - ১ |
|
পৌরাণিক চিত্র - ২ |
|
ব্রহ্মা ও গরুড়বাহন |
|
মৎস-কূর্ম-বরাহ অবতার |
|
নৃসিংহ ও বামন অবতার |
|
ভীষ্মের শরশয্যা |
|
ছিন্নমস্তা
|
সহায়ক গ্রন্থ :
১) বাঁকুড়া জেলার পুরাকীর্তি : অমিয়কুমার বন্দোপাধ্যায়
২) বিষ্ণুপুর : এস. এস. বিশ্বাস
******
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন