Pages

রবিবার, ২৩ জুন, ২০১৯

Pancharatna Shyamray Temple, Bishnupur, Bankura District, West Bengal



পঞ্চরত্ন  শ্যামরায়  মন্দির,  বিষ্ণুপুর, 
বাঁকুড়া  জেলা, পশ্চিম  বঙ্গ 

শ্যামল  কুমার  ঘোষ 

            পশ্চিমবঙ্গের  যাবতীয়  'টেরাকোটা'  মন্দিরের  মধ্যে  বিষ্ণুপুরের  শ্যামরায়  মন্দিরটি  গঠনশৈলী,  উন্নত  পোড়ামাটির  অলংকরণের  অন্তহীন  প্রাচুর্য  ও  উৎকর্ষতার  জন্য  এক  বিশিষ্ট  স্থানের  অধিকারী।  বর্গাকার  ভিত্তিবেদির  উপর  প্রতিষ্ঠিত  সম্পূর্ণ  ইটের  এই  মন্দিরটি  দৈর্ঘ্য  ও  প্রস্থে  ১১.৪  মিটার  এবং  উচ্চতায়  ১০.৭  মিটার।  দক্ষিণমুখী  এই  পঞ্চরত্ন  মন্দিরটি  স্থানীয়দের  কাছে  পাঁচচূড়া  মন্দির  নামে  পরিচিত।  মন্দিরের  দক্ষিণ  দেওয়ালে  নিবদ্ধ  চার  লাইনের  উৎসর্গলিপিটি :  "শ্রীরাধিকাকৃষ্ণমুদে  শকেঙ্কবে /  দাঙ্কযুক্তে  নবরত্নরত্নং /  শ্রীবীর  হম্বীর /  নরেশ  সূনুর্দদৌ  নৃপ  শ্রীরঘুনাথ /  সিংহঃ।।  মল্ল  সকে  ৯৪৯ ।  শ্রীরাজা  বীর  সিংহ।"  অর্থাৎ,  রাধাকৃষ্ণের  আনন্দের  জন্য  নরেশ  বীর  হাম্বীরের  পুত্র  নৃপ  রঘুনাথ  সিংহ  ৯৮৯  মল্লাব্দে  ( ১৬৪৩  খ্রীস্টাব্দে )  এই  নবরত্ন  মন্দির  দান  করলেন।  এখানে  উল্লেখ্য,  বঙ্গাব্দের  চেয়ে  মল্লাব্দ  ১০১  বছর  কম। 

           মন্দিরের  চারপাশে  ত্রিখিলান  প্রবেশপথ  বর্তমান।  মন্দিরটির  ভিতর  ও  বাহিরের  দেওয়ালের  সর্বাঙ্গে  রয়েছে  পোড়ামাটির  অলংকরণ।  রাধা-কৃষ্ণের  আনন্দের  জন্য  প্রতিষ্ঠিত  এ  দেবালয়ে  কৃষ্ণলীলা বা  কৃষ্ণনামগানের  দৃশ্যগুলি  অগ্রাধিকার  পেলেও  সামাজিক,  পৌরাণিক,  রামায়ণ-মহাভারতের  কাহিনী,  শৈব  অথবা  শাক্ত  উপাসনার  সঙ্গে  সম্পর্কিত,  জ্যামিতিক  ও  ফুলকারি  ভাস্কর্যও  অজস্র  ব্যবহৃত  হয়েছে।  আর  আছে   যুদ্ধ দৃশ্য।  তবে  সবচেয়ে  বেশি  প্রাধান্য  পেয়েছে  শ্রীকৃষ্ণের  রাসলীলা।  আর  একটা  উল্লেখযোগ্য,  এখানকার  'রাসমণ্ডল'  ভাস্কর্য।  তারাপদ  সাঁতরা'র  ভাষায়  বলি,  " পোড়ামাটির  'রাসমণ্ডল'  ফলকের  শ্রেষ্ঠ  নিদর্শন  দেখা  যায়  সতেরো  শতকের  বিষ্ণুপুরের  শ্যামরায়  মন্দিরে।  এ  মন্দিরের  দক্ষিণের  দেওয়ালে  যে  দুটি  বৃহদাকার  রাসমণ্ডল  দেখা  যায়  সেগুলি  শুধু  আকারেই  সুবৃহৎ  নয়,  গঠন  কৌশলের  অভিনবত্বেও  সমুজ্জল।  এ  ছাড়া  এ  মন্দিরের  পুবের  দেওয়ালেও  রয়েছে  এমন  চারটি  ছোটো  আকারের  রাসমণ্ডল।  শুধু  রাসমণ্ডল  কেন,  এ  মন্দিরের  প্রায়  গোটা  দেওয়াল  জুড়েই  উৎকীর্ণ  হয়েছে  রাসলীলা  দৃশ্যাবলি।  

            আলোচ্য  এ  মন্দিরের  রাসমণ্ডলের  মধ্যবিন্দুতে  রয়েছে  কৃষ্ণসহ  রাধা  ও  চন্দ্রাবলী  আর  তাদের  বৃত্তাকার  ভাবে  ঘিরে  অসংখ্য  গোপাঙ্গনা  হাত  ধরাধরি  ভঙ্গিতে নৃত্যরত।  শুধু  এখানেই  শেষ  নয়,  এ  বৃত্তের  পরে  আরও  এক  বৃত্ত  রচিত  হয়েছে  যেখানে  অসংখ্য  গোপিনীদের  সঙ্গে  শ্রীকৃষ্ণ  নৃত্যরত।  এসব  ভাস্কর্যফলকগুলির  পাশাপাশি  যুক্ত  হয়েছে  কৃষ্ণ  ও  গোপিনীদের  নৃত্যগীতের  অসংখ্য  ফলকচিত্র,  যেখানে  পাশাপাশি  অগণিত  মৃদঙ্গবাদক  ও  নর্তকীদের  মূর্তিও  উৎকীর্ণ। " 

            মন্দির-শিখরের  কেন্দ্রীয়  চূড়াটি  আটকোণা।  সংস্কারের  জন্য  সেটির  অনেকটাই  সিমেন্ট-পলস্তারাবৃত। কোণের  চূড়াগুলি  চারকোণা  ও  তাদের  ছাদ  উঁচুনিচু  কার্নিসের  বিন্যাসে  কিছুটা  পীঢ়া-দেউলের  মত।  মন্দিরে  কোন  বিগ্রহ  নেই।  মন্দিরটি  'ভারতীয়  পুরাতত্ত্ব  সর্বেক্ষণ' - এর  রক্ষণাধীন।
       

শ্যামরায় মন্দির, বিষ্ণুপুর 

মন্দিরের শিখর 

শিখরের বড় রত্নটির সামনের 'টেরাকোটা'র কাজ 
দক্ষিণ দিকের মাঝের খিলানের উপরের কাজ 

প্রতিষ্ঠাফলক 

দক্ষিণ দিকের একটি রাসমণ্ডল 

দক্ষিণ দিকের আর একটি রাসমণ্ডল

পূর্ব দিকের বাঁ দিকের খিলানের উপরের কাজ 

পূর্ব দিকের মাঝের খিলানের উপরের কাজ 

পূর্ব দিকের ডান দিকের খিলানের উপরের কাজ 

পূর্ব দিকের  দুটি রাসমণ্ডল

পূর্ব দিকের অপর দুটি রাসমণ্ডল

কৃষ্ণ-রাধিকা-চন্দ্রাবলী ও  অন্যান্য গোপিনীরা 

কৃষ্ণলীলা - ১

কৃষ্ণলীলা - ২

কৃষ্ণলীলা - ৩

কৃষ্ণলীলা - ৪

কৃষ্ণলীলা - ৫

কৃষ্ণলীলা - ৬

কৃষ্ণলীলা - ৭

কৃষ্ণলীলা - ৮

কৃষ্ণলীলা - ৯

কৃষ্ণলীলা - ১০

যুদ্ধদৃশ্য - ১

যুদ্ধদৃশ্য - ২

যুদ্ধদৃশ্য - ৩

যুদ্ধদৃশ্য - ৪

যুদ্ধদৃশ্য - ৫
যুদ্ধদৃশ্য - ৬

যুদ্ধদৃশ্য - ৭

যুদ্ধদৃশ্য - ৮

একটি 'টেরাকোটা' চিত্র 

সেতু বন্ধন 

নর্তকী ও মৃদঙ্গবাদক   

নৃত্যরত গোপিনীরা

বৃষবাহন 

দেবী কমলা 

নর্তকী ও মৃদঙ্গবাদক

গন্ধবেরুন্ড ( Gandaberunda )

পৌরাণিক চিত্র - ১

পৌরাণিক চিত্র - ২

ব্রহ্মা ও গরুড়বাহন 

মৎস-কূর্ম-বরাহ অবতার 

নৃসিংহ ও বামন অবতার 
ভীষ্মের শরশয্যা

ছিন্নমস্তা


সহায়ক  গ্রন্থ :
         ১)  বাঁকুড়া  জেলার  পুরাকীর্তি : অমিয়কুমার  বন্দোপাধ্যায় 
         ২)  বিষ্ণুপুর : এস. এস.  বিশ্বাস 

                                                          ******

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন