শ্রীরাধাবল্লভ জিউ'র মন্দির, শ্রীরামপুর, হুগলি
শ্যামল কুমার ঘোষ
সাইবনার ( উত্তর ২৪ পরগণা ) নন্দদুলাল জিউ মন্দির সম্বন্ধে জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন :
নন্দদুলাল জিউ মন্দির, সাইবনা, উত্তর ২৪ পরগণা
হাওড়া-ব্যাণ্ডেল রেলপথে শ্রীরামপুর অষ্টম রেলস্টেশন। হাওড়া থেকে রেলপথে দূরত্ব ২০ কিমি। গ্রান্ট ট্রাঙ্ক রোড এই শহরের উপর দিয়ে চলে গেছে। ১৭৫৩ খ্রীষ্টাব্দে শেওড়াফুলির রাজা রাজচন্দ্র রায় এখানে রামসীতার মন্দির নির্মাণ করেন। এই শ্রীরামচন্দ্র জিউ থেকে শ্রীরামপুর নামটি উদ্ভূত হয়েছে। ১৭৫৭ খ্রীষ্টাব্দে ডেনীয় বা দিনেমাররা ডেনমার্কের তৎকালীন রাজা পঞ্চম ফ্রেডরিকের নামানুসারে এই শহরের নাম রাখেন ফ্রেডরিক নগর। শ্রীপুর, আকনা, গোপীনাথপুর, মোহনপুর ও পেয়ারাপুর এই পাঁচটি স্থান নিয়ে ফ্রেডরিক নগর গঠিত হয়। বার্ষিক ১৬০১ সিক্কা টাকা খাজনায় দিনেমাররা শেওড়াফুলি-রাজের কাছ থেকে এই স্থানগুলি ইজারা নেয়। ১৮৪৫ খ্রীষ্টাব্দে ইংরাজরা ডেনীয়দের কাছ থেকে এই শহরটিকে কিনে নেয়। আগে শ্রীরামপুর মহকুমা ছিল না। ইংরাজদের হাতে আসার পর ১৮৪৭ খ্রীষ্টাব্দে দ্বারহাট্টা মহকুমার বদলে শ্রীরামপুর মহকুমা হয়। বিশপ হেবার শ্রীরামপুর সম্পর্কে বলেছিলেন যে এই শহরটি কলকাতার চেয়ে বেশি ইউরোপীয়।
শ্রীরামপুর স্টেশন থেকে ২ কিমি দূরে বল্লভপুর। রাধাবল্লভের নামেই অঞ্চলটির নাম হয় বল্লভপুর। এই বিগ্রহের প্রতিষ্ঠা নিয়ে একটি কাহিনী প্রচলিত আছে। কথিত আছে, শ্রীরামপুরের পার্শ্ববর্তী চাতরা নিবাসী, বৈষ্ণবচূড়ামণী, শ্রীচৈতন্য পরিকর, পণ্ডিত কাশীশ্বরের বড় ভাগনে এই রাধাবল্লভজিউর বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন। কাশীশ্বর অত্যন্ত গোঁড়া বৈষ্ণব ছিলেন। তিনি প্রতিদিন নিজের হাতে তাঁদের কুলদেবতা শ্রীকৃষ্ণের পূজা করতেন। তিনি কোন অ-বৈষ্ণব কে এই বিগ্রহ ছুঁতে দিতেন না। একদিন তিনি কোন কারণে বাড়ির বাইরে গিয়েছিলেন। তাঁর ফিরতে দেরি দেখে তাঁর ভাগনে শাক্তধর্মাবলম্বী রুদ্ররাম শ্রীকৃষ্ণের পূজা সম্পন্ন করেন । বাড়ি ফিরে এসে কাশীশ্বর এই দেখে খুবই রাগ করেন এবং রুদ্ররামকে কটুকথা বলেন। মনের দুঃখে রুদ্ররাম গৃহত্যাগ করে বর্তমান বল্লভপুরের যে জায়গায় 'হেনরী মার্টিন প্যাগোডা' অবস্থিত সেখানে আশ্রয় নেন এবং শ্রীকৃষ্ণের আরাধনায় ব্রতী হন। তাঁর ভক্তিতে সন্তুষ্ট হয়ে তাঁর আরাধ্য দেবতা স্বপ্নাদেশ দেন, গৌড়ের রাজপ্রাসাদ থেকে শিলা সংগ্রহ করে এই স্থানে শ্রীকৃষ্ণ বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করতে। রুদ্ররাম গৌড়ে উপস্থিত হয়ে বাদশাহের হিন্দু প্রধানমন্ত্রীর সাহায্যে একটি শিলাফলক সংগ্রহ করে বল্লভপুরে নিয়ে এলেন এবং ওই শিলাফলকটির পূজার্চনা করতে লাগলেন। পরে বৃন্দাবনের এক শিল্পী এসে ওই শিলাফলক থেকে তিনটি শ্রীকৃষ্ণ বিগ্রহ তৈরী করে দেন। প্রথমটির নাম হয় রাধাবল্লভ, দ্বিতীয়তীর নাম হয় শ্যামসুন্দর যে মূর্তিটি এখন খড়দহে পূজিত হয় এবং তৃতীয়টির নাম হয় নন্দদুলাল যাঁর অধিষ্ঠান সাঁইবনা বা সাইবনায়। ভক্তদের বিশ্বাস, একই দিনে এই তিনটি বিগ্রহ দর্শন করলে আর পুনর্জন্ম হয় না। আবার অনেকের ধারণা, একই দিনে ( সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্তের মধ্যে ) উপবাসি থেকে এই তিন বিগ্রহ দর্শন করলে কলির তিন প্রভু গৌরাঙ্গ, নিত্যানন্দ ও অদ্বৈত দর্শণের পুন্যলাভ হয়।
শ্রীরামপুর স্টেশন থেকে ২ কিমি দূরে বল্লভপুর। রাধাবল্লভের নামেই অঞ্চলটির নাম হয় বল্লভপুর। এই বিগ্রহের প্রতিষ্ঠা নিয়ে একটি কাহিনী প্রচলিত আছে। কথিত আছে, শ্রীরামপুরের পার্শ্ববর্তী চাতরা নিবাসী, বৈষ্ণবচূড়ামণী, শ্রীচৈতন্য পরিকর, পণ্ডিত কাশীশ্বরের বড় ভাগনে এই রাধাবল্লভজিউর বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন। কাশীশ্বর অত্যন্ত গোঁড়া বৈষ্ণব ছিলেন। তিনি প্রতিদিন নিজের হাতে তাঁদের কুলদেবতা শ্রীকৃষ্ণের পূজা করতেন। তিনি কোন অ-বৈষ্ণব কে এই বিগ্রহ ছুঁতে দিতেন না। একদিন তিনি কোন কারণে বাড়ির বাইরে গিয়েছিলেন। তাঁর ফিরতে দেরি দেখে তাঁর ভাগনে শাক্তধর্মাবলম্বী রুদ্ররাম শ্রীকৃষ্ণের পূজা সম্পন্ন করেন । বাড়ি ফিরে এসে কাশীশ্বর এই দেখে খুবই রাগ করেন এবং রুদ্ররামকে কটুকথা বলেন। মনের দুঃখে রুদ্ররাম গৃহত্যাগ করে বর্তমান বল্লভপুরের যে জায়গায় 'হেনরী মার্টিন প্যাগোডা' অবস্থিত সেখানে আশ্রয় নেন এবং শ্রীকৃষ্ণের আরাধনায় ব্রতী হন। তাঁর ভক্তিতে সন্তুষ্ট হয়ে তাঁর আরাধ্য দেবতা স্বপ্নাদেশ দেন, গৌড়ের রাজপ্রাসাদ থেকে শিলা সংগ্রহ করে এই স্থানে শ্রীকৃষ্ণ বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করতে। রুদ্ররাম গৌড়ে উপস্থিত হয়ে বাদশাহের হিন্দু প্রধানমন্ত্রীর সাহায্যে একটি শিলাফলক সংগ্রহ করে বল্লভপুরে নিয়ে এলেন এবং ওই শিলাফলকটির পূজার্চনা করতে লাগলেন। পরে বৃন্দাবনের এক শিল্পী এসে ওই শিলাফলক থেকে তিনটি শ্রীকৃষ্ণ বিগ্রহ তৈরী করে দেন। প্রথমটির নাম হয় রাধাবল্লভ, দ্বিতীয়তীর নাম হয় শ্যামসুন্দর যে মূর্তিটি এখন খড়দহে পূজিত হয় এবং তৃতীয়টির নাম হয় নন্দদুলাল যাঁর অধিষ্ঠান সাঁইবনা বা সাইবনায়। ভক্তদের বিশ্বাস, একই দিনে এই তিনটি বিগ্রহ দর্শন করলে আর পুনর্জন্ম হয় না। আবার অনেকের ধারণা, একই দিনে ( সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্তের মধ্যে ) উপবাসি থেকে এই তিন বিগ্রহ দর্শন করলে কলির তিন প্রভু গৌরাঙ্গ, নিত্যানন্দ ও অদ্বৈত দর্শণের পুন্যলাভ হয়।
সম্ভবত ১৬৭৭ খ্রীষ্টাব্দে রুদ্ররাম ভক্তদের সহযোগিতায় রাধাবল্লভের একটি আটচালা মন্দির গড়ে তোলেন। পরবর্তী সময়ে গঙ্গার ভাঙ্গনে মন্দিরটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে সেবায়তগণ বিগ্রহ স্থানানতরিত করেন এবং মন্দিরটি পরিত্যক্ত হয়। পরিত্যক্ত মন্দিরটি কিছুকাল গীর্জা হিসাবে ব্যবহৃত হয়। পাদ্রি হেনরি মার্টিন সাহেব কিছুকাল এখানে বসবাস করেন। এটি "হেনরী মার্টিন প্যাগোডা" নামে পরিচিত হয়। পরবর্তী কালে শ্রীরামপুরে একাধিক গির্জা নির্মিত হলে এটির প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়। তারপর এখানে মদ তৈরি হতে শুরু হয়। এখানে প্রস্তুত রাম প্যাগোডা-রাম নামে পরিচিত হয়। আরো পরে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এটির দখল নেন এবং কিছু সংস্কার হয়। কিন্তু আবার গঙ্গার ভাঙনের কারণে পরিত্যক্ত হয়। বর্তমানে দূর থেকে এটিকে মন্দির বলে আর চেনা যায় না। কাছে গেলে তবে বোঝা যায়। বর্তমান রাধাবল্লভ মন্দিরের সামনের রাস্তা ধরে গঙ্গার ধারে গেলে এটিকে দেখতে পাওয়া যাবে। হাওড়া জল প্রকল্প ( এখন পরিত্যক্ত ) এলাকার মধ্যে জঙ্গলের মধ্যে এটিকে খুঁজে নিতে হবে।
বল্লভপুরের বর্তমান মন্দিরটি কোলকাতা নিবাসী নয়ান চাঁদ মল্লিক ১৭৬৪ খৃষ্টাব্দে নির্মাণ করে দেন এবং ১৮৩৭ খৃষ্টাব্দে তাঁর পুত্র নিমাই চরণ মল্লিক বিগ্রহের নিত্যসেবার চিরস্থায়ী ব্যবস্থা করেন। এটি বাংলার বৃহদাকার আটচালা মন্দিরগুলির মধ্যে অন্যতম। প্রায় ৬০ ফুট ( ১৮ মি ) উঁচু, লম্বায় ৫০ ফুট ( ১৫ মি ) ও প্রস্থ ৪০ ফুট ( ১২ মি )। উঁচু ভিত্তি বেদির উপর প্রতিষ্ঠিত মন্দিরটি দক্ষিণমুখী। মন্দিরের সংলগ্ন অলিন্দ। তার সামনে নাটমন্দির। গর্ভগৃহে শ্রী রাধাবল্লভ ও শ্রীরাধা বিগ্রহ। রাধাবল্লভ মূর্তিটি কষ্টিপাথরের। পাশের ঘরে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার দারুমূর্তি। মন্দিরের গায়ে খোদাই লিপি : 'শ্রীকৃষ্ণ স্মরণার্থ / শুভমস্তু শকাব্দ ১৬৮৬ / দাতা নয়ান মল্লিক / শিল্পকার শ্রীকৃষ্ণ দাস।' ১৯৭৩ সালে 'বিড়লা জনকল্যাণ ট্রাস্ট' মন্দিরটির সংস্কার করে। সমস্ত বিগ্রহই নিত্য পূজিত। মন্দিরে বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বৈষ্ণব উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
আগে মাহেশের কমলাকর পিপলাই সেবিত জগন্নাথ বিগ্রহ রথে চড়ে আসতেন বল্লভপুর পর্যন্ত। বল্লভপুরের মন্দিরই ছিল মাহেশের জগন্নাথের গুণ্ডিচা বাড়ি। জগন্নাথ উল্টোরথ পর্যন্ত থাকতেন বল্লভপুরের মন্দিরে। তারপর ফিরে যেতেন মাহেশে। রথের সময়ের প্রণামীর টাকা-পয়সা নিয়ে দুই মন্দিরের সেবায়তদের মধ্যে মনোমালিন্যের ফলে সেই প্রথা বন্ধ হয়ে যায়। ১৮৫১ খ্রীষ্টাব্দে বল্লভপুর মন্দিরের সেবায়তরা আলাদা জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন। রাধাবল্লভের একটি বৃহৎ রাসমঞ্চ গঙ্গার ঘাটের কাছে শ্রীরামপুর জল প্রকল্পের কাছে আছে। ১৯৭৩ সালে 'বিড়লা জনকল্যাণ ট্রাস্ট' রাসমঞ্চটির সংস্কার করে।
মহারাজ নবকৃষ্ণ ১৭৭১ খৃষ্টাব্দে তাঁর মাতৃশাদ্ধ উপলক্ষ্যে এই শ্রীকৃষ্ণ তাঁর বাস ভবনে নিয়ে যান। কিন্তু ফিরিয়ে দিতে অস্বীকৃত হলেও সেবায়তদের অসম্মতিতে ফেরত দিতে বাধ্য হন। কিন্তু বিগ্রহের ব্যবহারের জন্য সোনার অলঙ্কার ও সেবার জন্য ভূসম্পত্তি অর্পণ করেন।
বল্লভপুরের মন্দিরে যেতে হলে হাওড়া থেকে ব্যাণ্ডেল গামী যে কোন ট্রেন ধরুন। স্টেশনের বাইরে থেকে অটোতে পৌঁছে যান বল্লভপুর। ঠাকুরবাড়ি স্ট্রীট ধরে একটু হাঁটলেই মন্দির। জি. টি. রোড ধরে গাড়িতেও যেতে পারেন।
মন্দিরটি পরিদর্শনের তারিখ : ২৯.০৮.২০১৬
রাধাবল্লভ মন্দির ( পূর্ব দিক থেকে তোলা ) |
রাধাবল্লভ মন্দির ( পশ্চিম দিক থেকে তোলা ) |
মন্দিরের শিখর-দেশ |
মন্দিরের কোনাচ |
শ্রীরাধাবল্লভ ও রাধিকা বিগ্রহ |
রাধাবল্লভের পুরানো মন্দির |
মন্দিরের ভগ্ন খিলান |
রাধাবল্লভের রাসমঞ্চ |
রাসমঞ্চের শিখর |
সহায়ক গ্রন্থাবলি :
১) পশ্চিম বঙ্গের পূজা-পার্বণ ও মেলা ( ২য় খণ্ড ) : অশোক মিত্র সম্পাদিত
২) পশ্চিমবঙ্গ ভ্রমণ ও দর্শন : ভূপতিরঞ্জন দাস
৩) হুগলী জেলার পুরাকীর্তি : নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য
নন্দদুলাল জিউ মন্দির, সাইবনা, উত্তর ২৪ পরগণা
-------------------------------------------
আমার ইমেল : shyamalfpb@gmail.com প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন।
-------------------------------------------
Ptoyjomei Dhonyobad jamai Shyamalbabu, Seramporer sristi theke suru kore Bangla bikhyato Sri Sri Radhabollov Jiu mondir Somporke Onek ojana tothyo jante parlam apnar ei lekhonir (Blog)doulote.
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
মুছুনঅসাধারণ
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
মুছুনমন্দিরের জন্য জমি কি ভাবে ও কাহার কাছথেকে পাওয়া যায়,দয়া করে তথ্যটি দেবেন
উত্তরমুছুন