Pages

শনিবার, ২২ জুন, ২০২৪

Annapurna and four Shiva temples, 608 Rabindra Sarani, Bagbazar, North Kolkata

 অন্নপূর্ণা  এবং চারটি  শিব  মন্দির,  ৬০৮  রবীন্দ্র  সরণি,  বাগবাজার,  উত্তর  কলকাতা

                      শ্যামল  কুমার  ঘোষ 

          বাগবাজার  স্ট্রিট  ও  রবীন্দ্র  সরণির  সংযোগস্থলের  কাছে   ৬০৮,  রবীন্দ্র  সরণিতে  অবস্থিত  অন্নপূর্ণা  এবং  চারটি  শিব  মন্দির।  সাধারণ  একটি  দোতালা  বাড়ি।  বাড়ির  তলায়  একটি  দর্জির  দোকান।  বাড়িটির  ডান  দিকের  দরজা  দিয়ে  প্রবেশ  করলে  সামনে  দেখা  যাবে  উঁচু  ভিত্তিবেদির  উপর  স্থাপিত,  পশ্চিমমুখী,  দুই  খিলানযুক্ত  একটি  একতলা  দালান  মন্দির।  দুটি  খিলানের  নিচে  দুটি  কাঠের  দরজা।  গর্ভগৃহের  সামনে  একটি  খোলা  অলিন্দ।  অলিন্দের  মেঝে  সাদা-কালো  পাথরের।  সিঁড়িগুলো  লাল  রঙের  সিমেন্টের।  

          এই  মন্দিরের  পিছনে  চারটি  পশ্চিমমুখী,  আটচালা  শৈলীর শিব  মন্দির।  মন্দিরগুলি  এখন  ভগ্ন।  মন্দিরের  গায়ে  কিছু  টেরাকোটার  কাজ  আছে।  উত্তর  দিক  থেকে  দ্বিতীয়  মন্দিরের  প্রবেশদ্বারের  খিলানের  মাথায়  আছে  পাথরের  উপরে  খোদাই  করা  একটি  প্রতিষ্ঠালিপি।  লিপিটির  পাঠ  নিম্নরূপ :

              "শাকে  বিলেশয়  বিলর্ত্ত ুবিধৌ  বিধা 

              য়ে  চিত্তেহবিলাস  ফলদং  গুরুপদ 

              পদ্ম  মাবাস্য  সংনির্ম্মতে  দ্বিজ  বিষ্ণু 

              রামতোকাকার্যীদ্বিমন্দির  মিদং  পরমৈত্রকাক্ষীঃ"

          পূর্ণচন্দ্র  দে  কাব্যরত্ন  উদ্ভটসাগর  কর্তৃক  লিপিটির  পাঠ :

              "শাকে  বিলেশয়বিলর্ত্ত ুবিধৌ  বিধায় 

              চিত্তেহভিলাষ  ফলদং  গুরুপাদপদ্মম্। 

              ঈশস্য  সংস্থিতি  কৃতো  দ্বিজ  বিষ্ণুরামোহ 

              কার্ষীদ্ধি  মন্দির  মিদং  পরমিষ্টকীর্ত্তিঃ।।"

          ( 'শাকে  বিলেশয়বিলর্ত্ত ুবিধৌ'  শকাঙ্কটি  অর্থ  করলে  দাঁড়ায়,  বিলেশয় = ৮,  বিল =  ৯,  ঋতু = ৬,  বিধু =  ১ ;  অতএব  অঙ্কস্য  বামাগতি  নিয়মানুসারে  দাঁড়ায়  ১৬৯৮  শকাব্দ। ) 

          পূর্ণচন্দ্র  দে  কাব্যরত্ন  উদ্ভটসাগর  এই  লিপিটির  কাব্যছন্দে  একটি  বঙ্গানুবাদও  করেছিলেন।  সেটি :

            "অভিলাষ-পদ  গুরু-চরণ  কমল

            স্মরণ  করিয়া  মনে  মনে  অবিরল 

            দ্বিজ  বিষ্ণুরাম  শিব  করিয়া  স্থাপন 

            নিজ  অভিলাষ  তাহে  করিয়া  পূরণ 

            ষোল-শত-অষ্টনব্বই  শাকের  বৎসরে 

            রচিল  মন্দির  এই  মহাভক্তিভরে।"

    ( দেবাশিস  বসু  সম্পাদিত  ' প্রাণকৃষ্ণ  দত্ত :  কলিকাতার  ইতিবৃত্ত  ও  অন্যান্য  রচনা '  পৃষ্ঠা  ২৩৬-২৩৭,  থেকে,  তারাপদ  সাঁতরা  লিখিত  ' কলকাতার  মন্দির-মসজিদ  স্থাপত্য-অলংকার--রূপান্তর '  গ্রন্থ  থেকে প্রাপ্ত )

          অর্থাৎ,  মা  অন্নপূর্ণার  মন্দিরসহ  চারটি  শিব  মন্দির  ১৬৯৮  শকাব্দে  ১৭৭৬  খ্রিস্টাব্দে  প্রতিষ্ঠা  করা  হয়।  প্রতিষ্ঠা  করেছিলেন  ওয়ারেন  হেস্টিংসের  স্নেহধন্য  সেই  আমলের  কলকাতার  আমিন  বিষ্ণুরাম  চক্রবর্তী। 

          এখানে  উল্লেখ্য,  মা  অন্নপূর্ণার  প্রচলিত  যে  মূর্তি  সর্বত্র  দেখা  যায়,  অন্নপূর্ণার  ডান  হাতে  অন্নদান  করার  হাতা,  বাঁ  হাতে  অন্নপাত্র  এবং  তাঁর  সামনে  শিব  ভিক্ষাপাত্র  হাতে  দাঁড়িয়ে  আছেন,  তা  কিন্তু  এখানে  অনুপস্থিত।  এ  মন্দিরে  একটি  কাঠের  সিংহাসনে  দেখা  যায়,  শিব  ও  অন্নপূর্ণা  পাশাপাশি  দাঁড়িয়ে  আছেন।  মন্দিরে  আর  একটি  কাঠের  সিংহাসনে  রাধা-কৃষ্ণের  যুগল  মূর্তিও  দেখা  যায়।

          মন্দির  চত্বরের  বাইরের  দেওয়ালে  কলকাতা  কর্পোরেশন  কর্তৃক  লেখা  ( 'মন্দির  চত্বর  গ্রেড  ১  হেরিটেজের  মর্যাদা  প্রাপ্ত' )  একটি  ধাতব  ফলক  লাগানো  আছে।

          এখানে  উল্লেখ্য,  এখন  যেখানে  মায়ের  ঘাট  তার  একটু  দক্ষিণে  কলকাতার  বিখ্যাত  বা  কুখ্যাত  ব্ল্যাক  ডেপুটি  গোবিন্দরাম  মিত্রের  পুত্র  রঘু  মিত্রের  ( রঘুনাথ  মিত্র )  নামে  একটি  ঘাট  হয়।  পরে  বিষ্ণুরাম  চক্রবর্তী  এই  অন্নপূর্ণা  মন্দিরসহ  চারটি  শিব  মন্দির  প্রতিষ্ঠা  করলে  রঘু  মিত্র  ঘাটের  নাম  এই  দেবীর  নামে  হয়  'অন্নপূর্ণা  ঘাট'।

শিব ও অন্নপূর্ণা 

৬০৮, রবীন্দ্র সরণির বাড়ি  

অন্নপূর্ণা মন্দির

অন্নপূর্ণা মন্দির ( অন্য দিক থেকে তোলা )

প্রতিষ্ঠাফলক 

একটি শিব মন্দিরের টেরাকোটা কাজ 

মন্দির চত্বরে লাগানো হেরিটেজ ফলক

রাধা-কৃষ্ণের যুগল মূর্তি

শিব ও অন্নপূর্ণা - ১

শিব ও অন্নপূর্ণা -২

*******

 রামায়ণের ৭টি খণ্ডের ৬৪ টি উপাখ্যান ও ১৮৫ টি টেরাকোটা ফলকের আলোকচিত্র সংবলিত আমার লেখা এবং 'রা প্রকাশন' কর্তৃক প্রকাশিত বই 'বাংলার টেরাকোটা মন্দিরে রামায়ণ' প্রকাশিত হয়েছে।


 বইটি ডাক যোগে সংগ্রহ করতে হলে যোগাযোগ করুন :  9038130757 এই নম্বরে। 

কলকাতার কলেজস্ট্রিটের মোড়ে দুই মোহিনীমোহন কাঞ্জিলালের কাপড়ের দোকানের মাঝের রাস্তা ১৫, শ্যামাচরণ দে স্ট্রিটের উপর অবস্থিত বিদ্যাসাগর টাওয়ারের দু'তলায় 'রা প্রকাশনে'র দোকান। ওখান থেকে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। কোনও অসুবিধা হলে উপরোক্ত নম্বরে ফোন করতে পারেন।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন