শ্রীশ্রী রামকানাই ঠাকুরের পাটবাড়ি, মুলুক, বোলপুর, বীরভূম
শ্যামল কুমার ঘোষ
বীরভূম জেলার বোলপুর থানার অন্তর্গত, বোলপুর-পালিতপুর সড়কে অবস্থিত এবং বোলপুর থেকে ৪ কিমি দূরের একটি গ্রাম মুলুক। এখানে শ্রীরামকানাই ঠাকুরের পাটবাড়ি ও সমাধি আছে। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর অন্যতম পার্শ্ব সহচর পণ্ডিত ধনঞ্জয়ের কনিষ্ঠ সহোদর সঞ্জয়ের পৌত্র এবং যদুচৈতন্যের পুত্র শ্রীরামকানাই ঠাকুর শ্রীচৈতন্যদেবের প্রায় শত বৎসর পরে আবির্ভূত হন। কথিত আছে, একনিষ্ঠ সাধক শ্রীরামকানাই ঠাকুরের গুণাবলী এবং অলৌকিক ক্ষমতার বিষয়ে জানতে পেরে রাজনগর রাজ এই সাধু সন্দর্শনে আসেন। ঠাকুরের ক্ষমতায় মুগ্ধ হয়ে দেবসেবার জন্য জমি দান করতে ইচ্ছা প্রকাশ করলে শ্রীরামকানাই ঠাকুর ভোগের অন্ন যতদূর পর্যন্ত ছড়াতে পেরেছিলেন সেই সীমা পর্যন্ত সমস্ত জমি রাজনগর রাজ দেবসেবার জন্য দান করেছিলেন।
এখানে শ্রীরামকানাই বৃন্দাবনের গুপ্ত অস্তিস্ত অনুভব করে মুলুক শ্রীপাটের প্রতিষ্ঠা করেন। ঠাকুবাড়িতে পাঁচখিলানবিশিষ্ট একটি দালান মন্দিরে কষ্টিপাথরের শ্রীশ্রীরাধাবল্লভ জিউর ও অষ্টধাতুর শ্রীমতীর মূর্তি এবং দারু নির্মিত শ্রীচৈতন্য বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন। দেবী অপরাজিতা ও রামেশ্বর শিবমন্দিরও এখানে অবস্থিত।
রাধাবল্লভ মন্দিরের সামনে একটি চাঁদনি আকৃতির নাটমন্দির বর্তমান। মন্দিরে কোন অলঙ্করণ নেই। শ্রীরামকানাই ঠাকুরের আবির্ভাব কালে সমাজে শাক্ত ও বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে তীব্র বৈরীভাব বিদ্যমান ছিল। রামকানাই ঠাকুর ধর্মের মধ্যে সংকীর্ণতার কোন প্রশয় না দিয়ে সমন্বয় সাধন করেন। একদিকে তিনি যেমন শ্রীচৈতন্য বিগ্রহ ও রাধাকৃষ্ণের যুগল-বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন তেমনি শ্রীরামেশ্বর শিব এবং অপরাজিতা দেবীর মূর্তি স্থাপন করে শিব ও শক্তি আরাধনার ব্যবস্থা করেন।
গোষ্ঠাষ্টমীর সময় চারদিনব্যাপী মুলুকে মেলা হয়। ওই মেলায় অন্যতম আকর্ষণ রসপর্যায়ের কীর্তন গান। মেলায় বিভিন্ন স্থান থেকে আগত অনেক বাউলের সমাবেশ ঘটে।
শ্রীরামকানাই ঠাকুরের পাটবাড়ির তোরণ-দ্বার |
পাটবাড়ির প্রবেশ-দ্বার |
শ্রীশ্রীরাধাবল্লভ মন্দির |
নাটমন্দির |
ফলক |
শ্রীরামকানাই ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত তমাল বৃক্ষ |
শ্রীরামকানাই ঠাকুরের কন্যার প্রতিষ্ঠিত অশ্বত্থ গাছ |
শ্রীরামকানাই ঠাকুরের সমাধি |
শ্রীশ্রীরাধাবল্লভ ও অন্যান্য বিগ্রহ |
শ্রীশ্রীরাধাবল্লভ ও শ্রীমতি বিগ্রহ |
কলকাতা থেকে কী ভাবে যাবেন ?
কলকাতা থেকে ট্রেনে বোলপুর-শান্তিনিকেতন। বোলপুরের জামবুনি বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে উঠে মুলুক স্টপেজে নামুন। কাছেই শ্রীরামকানাই ঠাকুরের পাটবাড়ি।
সহায়ক গ্রন্থ :
১) বীরভূম জেলার পুরাকীর্তি : দেবকুমার চক্রবর্তী
-------------------------------
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন