Pages

সোমবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২০

Eastern and Southern Side Temples of Char Bangla Temple Complex, Baranagar, Azimganj, Murshidabad


পূর্ব  ও  দক্ষিণ  দিকের  মন্দির,  চার  বাংলা  মন্দির  চত্বর,  বড়নগর,  আজিমগঞ্জ,  মুর্শিদাবাদ 

                    শ্যামল  কুমার  ঘোষ 

             রানি  ভবানী  পূর্ব  বাংলার  ( বর্তমানে  বাংলাদেশ )  রাজশাহী  জেলার  অন্তর্গত  ছাতিম  গ্রামের  আত্মারাম  চৌধুরীর  কন্যা।  তাঁর  মাতার  নাম  জয়দুর্গা।  রাজশাহীর ( নাটোর )  জমিদার  রাজা  রামকান্ত  রায়ের  সঙ্গে  তাঁর  বিয়ে  হয়।  রামকান্ত  ১১৫৩  বঙ্গাব্দে  পরলোকগমন  করলে  রানি  ভবানী  তাঁর  সমস্ত  সম্পত্তির  উত্তরাধিকারিণী  হয়ে  বাংলার  জমিদারদের  মধ্যে  শ্রেষ্ঠ  স্থান  অধিকার  করেন।  তাঁর  জমিদারির  আয়  ছিল  প্রায়  দেড়  কোটি  টাকা।  তার  মধ্যে  ৭০  লক্ষ  টাকা  সরকারকে  রাজস্ব  দিতে  হত।  বাকি  টাকার  প্রায়  সমস্তটাই  তিনি  পুণ্যকাজে  ব্যয়  করতেন।  সেই  সময়  বঙ্গের  সমস্ত  জমিদারদের  মধ্যে  নাটোর  বংশের  আয়  ছিল  সবচেয়ে  বেশি

              মুর্শিদাবাদ  জেলার  বড়নগর  ভাগীরথী  নদীর  পশ্চিম  তীরের  একটি  গ্রাম।  এই  গ্রামের  ১  কিমি  দূরের  রেলস্টেশন  আজিমগঞ্জ  সিটি  এবং  ২  কিমি  দূরের  স্টেশন  আজিমগঞ্জ  জংশন।  কলকাতা  থেকে  আজিমগঞ্জ  জংশন  ২১৯  কিমি।  হাওড়া  থেকে  এক্সপ্রেস  ট্রেনে  গেলে  আজিমগঞ্জ  জংশনে  নামতে  হবে।  সেখান  থেকে  টোটোতে   আজিমগঞ্জ  সিটিতে  যাওয়া  যায়।  শিয়ালদহ  থেকে  প্যাসেঞ্জার  ট্রেনে  গেলে  আজিমগঞ্জ  সিটিতে  নামতে  পারেন।  থাকার  জন্য  সিটি  স্টেশনের  পাশে  কয়েকটি  হোটেল  আছে।  শিয়ালদহ-লালগোলা  লাইনের  জিয়াগঞ্জ  স্টেশনে  নেমে  গঙ্গা  পেরিয়েও  বড়নগরে  যেতে  পারেন।

            বড়নগর  রানি  ভবানীর  অতি  প্রিয়  ছিল।  জীবনের  শেষ  ভাগ  তিনি  এখানেই  অতিবাহিত  করেন।  সেকালে  বড়নগর  ছিল  মুর্শিদাবাদের  বারাণসী।  এখানে  তিনি  বেশ  কয়েকটি  মন্দির  নির্মাণ  করেন।  তার  মধ্যে  'চারবাংলা'  মন্দিরগুচ্ছ  অন্যতম।  চারটি  কারুকার্যখচিত  একবাংলা  ( দোচালা )  মন্দির  একটি  অল্পপরিসর  বর্গাকার  প্রাঙ্গণে  অবস্থিত।  এগুলি  রানি  ভবানীর  অক্ষয়  কীর্তি।  এখানে  আমি  পূর্ব  ও  দক্ষিণ  দিকের  মন্দিরদুটি  নিয়ে  আলোচনা  করব।  অন্য  দুটি  মন্দির  আমি  অন্যত্র  আলোচনা  করেছি।  নিচে  সেই  দুটি  মন্দিরের  লিংক  দিলাম। 
             
     ১) উত্তর  দিকের  মন্দির,  চার  বাংলা  মন্দির  চত্বর,  বরনগর 

    ২) পশ্চিম  দিকের  মন্দির,  চার  বাংলা  মন্দির  চত্বর,  বরনগর 

            প্রথমে  পূর্ব  দিকের  মন্দির।  এই  মন্দিরটি  উঁচু  ভিত্তিবেদির  উপর  স্থাপিত  পশ্চিমমুখী  ও  এক  বাংলা  ( দোচালা )  শৈলীর।  মন্দিরের  সামনে  তিনটি  খিলানযুক্ত  প্রবেশপথ।  মন্দিরের  সামনের দেওয়ালে  পঙ্খের  সুন্দর  কাজ  আছে।  শম্ভু  ভট্টাচার্য  তাঁর  'পশ্চিম  বঙ্গের  মন্দির'  গ্রন্থে  লিখেছেন,  " চুনবালির  পলস্তারা  কাটতে  শিল্পীগণ  এখানে  'অস্ত্র'  চালিয়েছেন  ক্যানভাসে  তুলি  চালানোর  মতন  করে।"  মন্দিরে  পঙ্খ  অলঙ্করণের  বিষয় : রামায়ণের  কাহিনী,  কৃষ্ণলীলা,  দশাবতার  চিত্র,  ষড়ভুজ  গৌরাঙ্গ,  তৃষ্ণার্তকে  সুন্দরীর  জলদান,  মা  ও  শিশু,  সপরিবারে  দুর্গা,  উড়ন্ত   পক্ষীদলের  মধ্যে  সীতা-সহ  রাবণের  রথ  ইত্যাদি।  কিন্তু  অযত্নে,  ছাতলার ( ছত্রাক )  প্রকোপে  এগুলি  এখন  খুবই  ম্লান।

রামরাজা, ভক্ত হনুমান ও অন্য একটি চিত্র

চার বাংলার পূর্ব দিকের মন্দির

বাঁ দিকের খিলানের উপরের কাজ

মাঝের খিলানের উপরের কাজ

ডান দিকের খিলানের উপরের কাজ

কুলুঙ্গির কাজ - ১
( রাবণ কর্তৃক সীতাহরণ, রামরাজা ও অন্য একটি চিত্র )

কুলুঙ্গির কাজ - ২
( রামরাজা, ভক্ত হনুমান ও অন্য একটি চিত্র )

কুলুঙ্গির কাজ - ৩
( সপরিবারে দুর্গা )

কুলুঙ্গির কাজ - ৪
( গণেশ, লক্ষ্মী ও মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা )


কুলুঙ্গির কাজ - ৫
( মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা, সরস্বতী ও কার্তিক  )

কুলুঙ্গির কাজ - ৬
( কৃষ্ণলীলা - ১ )
কুলুঙ্গির কাজ - ৭
( কৃষ্ণলীলা - ২ )

কুলুঙ্গির কাজ - ৮

কুলুঙ্গির কাজ - ৯
( দুই গোপিনীসহ  কৃষ্ণ )

কুলুঙ্গির কাজ - ১০
( রাবণ কর্তৃক সীতাহরণ )

কুলুঙ্গির কাজ - ১১
 ( মৎসাবতার )

কুলুঙ্গির কাজ - ১২
 ( কূর্মাবতার )

কুলুঙ্গির কাজ - ১৩
( ষড়ভুজ গৌরাঙ্গ )



            এবার  দক্ষিণ  দিকের  মন্দির।  এই  মন্দিরটিও  উঁচু  ভিত্তিবেদির  উপর  স্থাপিত,  উত্তরমুখী  ও  এক  বাংলা  ( দোচালা )  শৈলীর।  মন্দিরের  সামনে  তিনটি  খিলানযুক্ত  প্রবেশপথ।  মন্দিরের  সামনের দেওয়ালে  খুব  সামান্যই  টেরাকোটা  অলংকরণ  আছে।
চার বাংলার দক্ষিণ দিকের মন্দির 

মাঝের খিলানের উপরের কাজ 

বাঁ দিকের কৌণিক ভাস্কর্য 

ডান দিকের কৌণিক ভাস্কর্য 
  সহায়ক  গ্রন্থ : 
               ১) মুর্শিদাবাদ-কাহিনী :  নিখিলনাথ  রায় 
             
                     --------------------------------------------
            আমার  ইমেল :  shyamalfpb@gmail.com   প্রয়োজনে  যোগাযোগ  করতে  পারেন।
                                                

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন