মদনমোহন মন্দির, বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া, পশ্চিম বঙ্গ
শ্যামল কুমার ঘোষ
উৎকৃষ্ট পোড়ামাটি-অলংকরণের প্রাচুর্যে বিষ্ণুপুরের নগরদেবতা মদনমোহন মন্দিরটি বিখ্যাত। ১.৪ মিটার উঁচু মাকড়া-পাথরের ভিত্তিবেদির উপর স্থাপিত, দক্ষিণমুখী ও একরত্ন শৈলীর মন্দিরটির পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণ দিক ত্রিখিলান দালানযুক্ত। সামনের দেওয়ালের খিলানের দু পাশের দেওয়ালে ও কার্নিসের নিচে চার সারি করে 'টেরাকোটা'-অলংকরণ নিবদ্ধ হয়েছে ও খোপের মধ্যে প্রতিটি মূর্তিকে ঘিরে আছে সুন্দর ফুলকারি বেষ্টনী। নিচের দিকের প্যানেলগুলিতে আছে পশু-পক্ষী ভাস্কর্য, কৃষ্ণ লীলা, দশাবতার ও অন্যান্য পৌরাণিক কাহিনী। উপরের দিকে স্থান পেয়েছে প্রধানতঃ যুদ্ধদৃশ্য। থামের গায়ে আছে কীর্তন গায়ক-গায়িকা ও বাজিয়ের দল, খিলানশীর্ষে কুরুক্ষেত্রযুদ্ধ ও মহাভারতের কাহিনী। দালানের ভিতরের দেওয়ালও অলংকারবর্জিত নয়। পূর্ব ও পশ্চিম দিকের দেওয়ালেও অল্প 'টেরাকোটা'-অলংকরণ আছে। মদনমোহন মন্দিরের অন্যতম আকর্ষণ হল, 'হংসলতা' বা 'হংসমালা' প্যানেলগুলি। মন্দিরের প্রতিষ্ঠালিপিতেও হংসচিত্র উৎকীর্ণ। মন্দিরের 'হংসলতা' প্যানেলগুলি যেন হংসের সজীব ও ধারাবাহিক জীবনচিত্র। হংসজীবনের এমন নিখুঁত 'স্টাডি' 'টেরাকোটা' মন্দিরে বিরল।
মন্দিরটি দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে ১২.২ মিটার ও উচ্চতায় প্রায় ১০.৭ মিটার। মল্লরাজ দুর্জন সিংহ ১০০০ মল্লাব্দে ( ১৬৯৪ খ্রীষ্টাব্দে ) এটির প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে উল্লেখ্য, বঙ্গাব্দের চেয়ে মল্লাব্দ ১০১ বছর কম। মন্দিরের দক্ষিণ দেওয়ালে নিবদ্ধ চার লাইনের উৎসর্গলিপিটি : " শ্রীরাধাব্রজরাজনন্দন পদাম্ভোজেষু তৎপ্রীতয়ে / মল্লাব্দে ফনীরাজশীর্ষগণিতে মাসে শুচৌ নির্মলে / সৌধং সুন্দররত্নমন্দিরমিদং সার্দ্ধংস্বচেতোহলিনা / শ্রীমদ্দুর্জন সিংহ ভূমিপতিনা দত্তং বিশদ্ধত্মনা। ১০০০ । " অর্থাৎ, রাধাকৃষ্ণের পদকমলে তাঁদের প্রীতির জন্য বিশুদ্ধাত্মা দুর্জন সিংহ ভূমিপতি দ্বারা নিজ চিত্তরূপ অলির সঙ্গে এই সুন্দর রত্ন-মন্দির ১০০০ মল্লাব্দে নির্মল শুচি মাসে প্রদত্ত হল।
মূল মন্দিরের সামনে একটি চারচালা নাটমন্দির আছে। নাটমন্দিরের গায়েও টেরাকোটা অলংকরণ লক্ষ্য করা যায়। মন্দিরের প্রবেশতোরণটি দোচালা। মন্দিরটি পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। এখানে উল্লেখ্য, এ দেবালয়ের প্রবেশতোরণ, নাটমন্দির ও পাঁচিলের কিছু অংশ কালের করাল গ্রাসে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল। 'ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ' ভেঙে পড়া অংশ পুনর্নির্মাণ করে হতশ্রী দেবপ্রাঙ্গণটিকে শ্রীমণ্ডিত করেন।
মন্দিরের গর্ভগৃহে শ্রীশ্রীমদনমোহন-রাধিকা মূর্তি নিত্য পূজিত। বীর হাম্বির যে মদনমোহন বিগ্রহকে জোর করে বিষ্ণুপুরে নিয়ে আসেন এবং দুর্জন সিংহ তাঁকে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন সেই মদনমোহন কিন্তু এটি নন। তাঁর অধস্তন তৃতীয় পুরুষ, চৈতন্য সিংহ, অর্থাভাবে মদনমোহনের বিগ্রহটি কলকাতার বাগবাজারের গোকুল মিত্রের কাছে বন্ধক দিতে বাধ্য হন।* পরে মদনমোহনের পৃথক এক মূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সে মূর্তি চুরি হওয়ার পরে আর এক প্রস্থ রাধাকৃষ্ণের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
মূল মন্দিরের সামনে একটি চারচালা নাটমন্দির আছে। নাটমন্দিরের গায়েও টেরাকোটা অলংকরণ লক্ষ্য করা যায়। মন্দিরের প্রবেশতোরণটি দোচালা। মন্দিরটি পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। এখানে উল্লেখ্য, এ দেবালয়ের প্রবেশতোরণ, নাটমন্দির ও পাঁচিলের কিছু অংশ কালের করাল গ্রাসে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল। 'ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ' ভেঙে পড়া অংশ পুনর্নির্মাণ করে হতশ্রী দেবপ্রাঙ্গণটিকে শ্রীমণ্ডিত করেন।
মন্দিরের গর্ভগৃহে শ্রীশ্রীমদনমোহন-রাধিকা মূর্তি নিত্য পূজিত। বীর হাম্বির যে মদনমোহন বিগ্রহকে জোর করে বিষ্ণুপুরে নিয়ে আসেন এবং দুর্জন সিংহ তাঁকে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন সেই মদনমোহন কিন্তু এটি নন। তাঁর অধস্তন তৃতীয় পুরুষ, চৈতন্য সিংহ, অর্থাভাবে মদনমোহনের বিগ্রহটি কলকাতার বাগবাজারের গোকুল মিত্রের কাছে বন্ধক দিতে বাধ্য হন।* পরে মদনমোহনের পৃথক এক মূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সে মূর্তি চুরি হওয়ার পরে আর এক প্রস্থ রাধাকৃষ্ণের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
মদনমোহন মন্দির, বিষ্ণুপুর বাঁ দিকে প্রবেশ তোরণ আর ডান দিকে ভোগ ঘর |
প্রবেশ তোরণ ( বাইরে থেকে তোলা ) |
প্রবেশ তোরণ ( ভিতর থেকে তোলা ) |
মদনমোহন মন্দির, বিষ্ণুপুর ( নাটমন্দির থেকে তোলা ) |
সামনের, বাঁ দিকের খিলানের উপরের কাজ |
সামনের, মাঝের খিলানের উপরের কাজ |
সামনের, ডান দিকের খিলানের উপরের কাজ |
ভিত্তিবেদি সংলগ্ন কাজ - ১ |
ভিত্তিবেদি সংলগ্ন কাজ - ২ |
ভিত্তিবেদি সংলগ্ন কাজ - ৩ |
ভিত্তিবেদি সংলগ্ন কাজ - ৪ |
ভিত্তিবেদি সংলগ্ন কাজ - ৫ |
ভিত্তিবেদি সংলগ্ন কাজ - ৬ |
ভিত্তিবেদি সংলগ্ন কাজ - ৭ |
ভিত্তিবেদি সংলগ্ন কাজ - ৮ |
হংসলতা - ১ |
বড় করে |
হংসলতা - ২ |
হংসলতা - ৩ |
শ্রীকৃষ্ণের গোষ্ঠলীলা - ১ |
শ্রীকৃষ্ণের গোষ্ঠলীলা - ২ |
খোপের মধ্যে টেরাকোটা অলংকরণ - ১ |
খোপের মধ্যে টেরাকোটা অলংকরণ - ২ |
খোপের মধ্যে টেরাকোটা অলংকরণ - ৩ |
খোপের মধ্যে টেরাকোটা অলংকরণ - ৪ |
খোপের মধ্যে টেরাকোটা অলংকরণ - ৫ |
খোপের মধ্যে টেরাকোটা অলংকরণ - ৬ |
খোপের মধ্যে টেরাকোটা অলংকরণ - ৭ |
খোপের মধ্যে টেরাকোটা অলংকরণ - ৮ |
খোপের মধ্যে টেরাকোটা অলংকরণ - ৯ |
খোপের মধ্যে টেরাকোটা অলংকরণ - ১০ |
খোপের মধ্যে টেরাকোটা অলংকরণ - ১১ |
খোপের মধ্যে টেরাকোটা অলংকরণ - ১২ |
নৃত্যের তালে তালে - ১ |
নৃত্যের তালে তালে - ২ |
নৃত্যের তালে তালে - ৩ |
নৃত্যের তালে তালে - ৪ |
বাজিয়ের দল |
দুই গোপীসহ কৃষ্ণ - ১ |
দুই গোপীসহ কৃষ্ণ - ২ |
নবনারীকুঞ্জর |
ড্রাগনসদৃশ টেরাকোটা ফলক |
ফুলকারি নকশা |
প্রতিষ্ঠাফলক |
নাটমন্দির |
নাটমন্দিরের গায়ে টেরাকোটা অলংকরণ - ১ |
নাটমন্দিরের গায়ে টেরাকোটা অলংকরণ - ২ |
নাটমন্দিরের গায়ে টেরাকোটা অলংকরণ - ৩ |
নাটমন্দিরের গায়ে টেরাকোটা অলংকরণ - ৪ |
নাটমন্দিরের গায়ে টেরাকোটা অলংকরণ - ৫ |
নাটমন্দিরের গায়ে টেরাকোটা অলংকরণ - ৬ |
মদনমোহন ও রাধিকা মূর্তি
সহায়ক গ্রন্থ :
১) বাঁকুড়া জেলার পুরাকীর্তি : অমিয়কুমার বন্দোপাধ্যায়
২) মল্লভূম বিষ্ণুপুর : মনোরঞ্জন চন্দ্র
****** |
অসাধারন একটা ঐতিহাসিক লেখা পড়লাম.....অনেক অজানা তথ্য জানতেও পারলাম.....অনেক অনেক শুভেচ্ছা.....ভালো থাকবেন.......ঈশ্বর মালিক......
উত্তরমুছুন