আটচালা মন্দির ( শিব ), কৃষ্ণপুর, হুগলি
শ্যামল কুমার ঘোষ
পোলবা-দাদপুর ব্লকের অন্তর্গত কৃষ্ণপুর একটি গ্রাম। হাওড়া-বর্ধমান কর্ড লাইনের বেলমুড়ি স্টেশন থেকে এই গ্রামে যাওয়া যায়। গ্রামে ঘোষবংশ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত একটি আটচালা মন্দির উল্লেখযোগ্য। এটি আগে শিবের মন্দির ছিল। বহুদিন হল মন্দিরে কোন বিগ্রহ নেই। এখন এটি একটি আশ্রমের ভাঁড়ার ঘর হিসাবে এটি ব্যবহৃত হয়। মন্দিরটি ঘেরা ক্ষেত্রে অবস্থিত। এই মন্দিরের 'টেরাকোটা' সম্পর্কে পূর্বসূরি লেখকদের লেখা পড়েছিলাম। কিন্তু কিছুতেই মন্দিরটির হদিস করতে পারিনি। অনেক চেষ্টার পর মন্দিরটি খুঁজে পাই। আগে এই গ্রামে একটি 'টেরাকোটা' পঞ্চরত্ন মন্দিরও ছিল। কিন্তু এখন সেই মন্দিরটি বিনষ্ট।
সামান্য উঁচু ভিত্তিবেদির উপর স্থাপিত, ত্রিখিলান প্রবেশপথবিশিষ্ট, পশ্চিমমুখী, অলিন্দযুক্ত ও বাংলা আটচালা শৈলীর মন্দির। গর্ভগৃহে ঢোকার একটিই দরজা। মন্দিরের সামনের দেওয়াল টেরাকোটা অলংকারে অলংকৃত। যদিও রঙের প্রলেপে সেই 'টেরাকোটা' অনেকটাই ম্লান। ত্রিখিলান প্রবেশপথের উপরে টেরাকোটার বিষয় রাম-রাবণের যুদ্ধ। বাঁদিকের খিলানের উপরের একটি ফলকে ' জটায়ু কর্তৃক রাবণের রথ আক্রমণের দৃশ্য ' খুবই আকর্ষণীয়। ভিত্তিবেদি সংলগ্ন দ্বিতীয় সারিতে কৃষ্ণের বাল্যলীলার দৃশ্য। বকরাক্ষস, অরিষ্ট নামক ষাঁড়, কেশী নামক ঘোড়া ও কুবলয়পীড় নামক হস্তী নিধন পাশাপাশি খোদিত হয়েছে। এতগুলি অসুরবধ দৃশ্যের সমাবেশ খুবই বিরল। একবার ব্রহ্মা রাখাল বালক ও গাভীদের একটি গুহায় লুকিয়ে রাখেন। কৃষ্ণ বংশীবাদনের দ্বারা ব্রহ্মাকে মোহিত করেন। এই গল্পের চিত্ররূপ দিতে অন্যান্য মন্দিরের মতো এখানেও রাখাল বালক ও গাভীগুলোকে একটি বাক্সের মধ্যে আটকে রাখতে দেখা যায়। তাদের মাথাগুলো শুধু বেরিয়ে আছে। এছাড়া পুতনা বধ, নৌকাবিলাস ইত্যাদিও আছে। ভিত্তিবেদির প্রথম সারিতে ঘোড়ায় চড়ে সাহেব, ঘোড়ায় চড়ে যুদ্ধ, অমিততেজ পুরুষ বা দানবাকৃতি মানুষ, হার্মাদ রণতরী, বাঁশবাজি বা মাদারির খেলা, শিবিকায় চড়ে জমিদার বা সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির অন্যত্র গমন ইত্যাদি আছে। একটি পূর্ণ স্তম্ভে পরিবার সহ দুর্গা মূর্তি, মেয়েদের চুল পরিচর্যা, সিদ্ধি ঘোঁটা আছে। আর একটি উল্লেখযোগ্য, বাঁকানো কার্নিসের নিচের দু সারিতে ও খিলানের উপরের একটি সারিতে কুলুঙ্গির মধ্যে পাখি ও জীবজন্তুর সমাবেশ।
মন্দিরের প্রতিষ্ঠাকাল ১৬৮৪ শকাব্দ বা ১৭৬২ খ্রীষ্টাব্দ। দক্ষিণ দিকের দেওয়ালে একটি প্রতিষ্ঠাফলক আছে। যদিও তা অস্পষ্ট। কিন্তু সাল বোঝা যাচ্ছে। এই দেওয়ালে প্রতিষ্ঠাফলক ছাড়া অন্য কিছু নেই।
কী ভাবে যাবেন ?
বেলমুড়ি স্টেশন থেকে ট্রেকারে যাওয়া যায়। ধনিয়াখালি হল্ট স্টেশন থেকে চুঁচুড়া গামী বাসে অথবা চুঁচুড়া স্টেশন থেকে ধনিয়াখালি গামী বাসে চুঁচুড়া-ধনিয়াখালি রোডের উপর অবস্থিত মহেশ্বরপুর ( স্থানীয় লোকেরা বলেন মহিষাপুর ) ব্রিজের নিচের নামুন। সেখান থেকে মন্দিরে ( স্থানীয় লোকেরা বলেন সাধুবাবার আশ্রম ) যাওয়ার ট্রেকার / অটো / টোটো পাবেন। ট্রেকারে গেলে চকের মোড়ে নামতে হবে। এই ট্রেকার বেলমুড়ি স্টেশন থেকে আসে। মন্দির বন্ধ থাকলে চাবি চেয়ে নেবেন। লক্ষ্মণ মালিকের কাছে মন্দিরের চাবি থাকে।
Ei mandir kivabe jabo bolle khub valo hoy...Google map e search kore pachhi na ... Belmuri station theke kivabe jawa jabe seta jante chaichi
উত্তরমুছুনকী ভাবে যাবেন তা লিখে দিয়েছি। ব্লগের লেখাটা পড়ুন। Baba'r Ashram, Krishnapur দিয়ে Google-এ সার্চ করুন। পাবেন
মুছুনঅশেষ ধন্যবাদ । আপনার লেখা গুলো পড়ছি...
মুছুন