শ্রীশ্রী লক্ষ্মী জনার্দন মন্দির, গুপ্তপাড়া, কুলতেঘরী, হুগলি
শ্যামল কুমার ঘোষ
হাওড়া-তারকেশ্বর রেলপথে হাওড়া থেকে তারকেশ্বর ২১ তম রেলস্টেশন। শেওড়াফুলি থেকে দ্বাদশ স্টেশন। রেলপথে হাওড়া থেকে দূরত্ব ৫৭ কিমি। তারকেশ্বর থেকে চার / পাঁচ কিমি দূরের একটি গ্রাম কুলতেঘরী। তারকেশ্বর থেকে বাসে এখানে যাওয়া যায়। গ্রামে স্থানীয় গুপ্ত পরিবার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত লক্ষ্মী জনার্দনের মন্দির উল্লেখযোগ্য।
সামান্য উঁচু ভিত্তিবেদির উপর স্থাপিত, ত্রিখিলান প্রবেশপথবিশিষ্ট, অলিন্দযুক্ত, দক্ষিণমুখী ও বাংলা আটচালা শৈলীর মন্দির। মন্দিরের গর্ভগৃহে ঢোকার একটিই দরজা। সামনের ও পূর্ব দিকের দেওয়াল 'টেরাকোটা অলংকরণে অলংকৃত। গুপ্ত পরিবার থেকে জানা গেল, মন্দিরটি অনেকটা বসে গেছে। আগে মন্দিরে ওঠার সাত / আটটি সিঁড়ি ছিল। এখন মাত্র দুটি সিঁড়ি আছে। মন্দিরের সামনের দুটি পূর্ণ স্তম্ভে, দেওয়াল সংলগ্ন দুটি অর্ধ স্তম্ভে, তিনটি খিলানের উপরে ও বর্গাকার কুলুঙ্গিতে পোড়া-মাটির প্রচুর টেরাকোটা অলংকরণ আছে। মন্দিরে যে প্রতিষ্ঠা-ফলক আছে তাতে কয়েকটি সাল উল্লেখ আছে। প্রথমটি অষ্পষ্ট। দ্বিতীয়টি ১৭১৪ শকাব্দ ( ১৭৯২ খ্রিষ্টাব্দ ) বা ১১৯৯ বঙ্গাব্দ। তৃতীয়টি ১৭৫৬ শকাব্দ ( ১৮৩৫ খ্রিষ্টাব্দ ) বা ১২৪১ বঙ্গাব্দ। তাহলে ধরে নেওয়া যায় যে মন্দিরটির প্রতিষ্ঠা-কাল দ্বিতীয়টি বা তার আগের। দ্বিতীয় বা তৃতীয়টি সংস্কার -কাল। আরও দুটি সাল উল্লেখ করা আছে তা আরও পরের অর্থাৎ সংস্কারের সময় লেখা হয়েছে। মন্দিরের সামনের দেওয়ালের টেরাকোটার বিষয় : রামরাবণের যুদ্ধ, কৃষ্ণের বাল্যলীলা, পর্তুগিজ যুদ্ধজাহাজ, বন্দুক হাতে সাহেব, বকরাক্ষস বধ, পুতনা বধ, সপরিবারে দুর্গা, হরগৌরী, দুই সখীসহ কৃষ্ণ, রথে অভিজাত ব্যক্তি এবং কুলুঙ্গির মধ্যে বিভিন্ন মূর্তি ইত্যাদি। পূর্ব দিকের দেওয়ালে দু-একটি মূর্তি, বেশ কয়েকটি বড় ফুল ও তিনটি খিলানের উপর ফুলকারি নকশা আছে। তিনটি খিলানের নিচে আছে তিনটি ভরাট করা দরজা। গর্ভগৃহের দরজার খিলানের উপর আছে ফুলকারি নকশা। গর্ভগৃহে শ্রীশ্রী লক্ষ্মী জনার্দন ( শালগ্রাম শিলা ) নিত্য পূজিত। এই মন্দিরটি আমি নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য লিখিত " হুগলী জেলার পুরাকীর্তি " গ্রন্থে পাই নি। Google Map-এ কয়েকজনের ( সুমন্ত্র, শুভঙ্কর, অর্ক ও শৈবাল ) দেওয়া এই মন্দিরের ছবি দেখে এর হদিশ পাই। তাঁদের ধন্যবাদ। মন্দিরটির পরিদর্শন তারিখ : ২৩.১০.২০১৭
 |
লক্ষ্মী জনার্দন মন্দির |
 |
মন্দিরের সামনের বিন্যাস |
 |
মন্দিরের সামনের ত্রিখিলান বিন্যাস |
 |
মাঝের খিলানের উপরের কাজ |
 |
মাঝের খিলানের উপরের কাজ ( বড় করে ) |
 |
বাঁ দিকের খিলানের উপরের কাজ |
 |
ডান দিকের খিলানের উপরের কাজ |
 |
মন্দিরের একটি পূর্ণ স্তম্ভ |
 |
মন্দিরের আর একটি পূর্ণ স্তম্ভ |
 |
ভিত্তিবেদি সংলগ্ন 'টেরাকোটা'র কাজ - ১ |
 |
ভিত্তিবেদি সংলগ্ন 'টেরাকোটা'র কাজ - ২ |
 |
সপরিবারে দুর্গা |
 |
ভিত্তিবেদি সংলগ্ন 'টেরাকোটা'র কাজ - ৩ |
 |
ভিত্তিবেদি সংলগ্ন 'টেরাকোটা'র কাজ - ৩ক |
 |
ভিত্তিবেদি সংলগ্ন 'টেরাকোটা'র কাজ - ৩খ |
 |
হরগৌরী, কৃষ্ণ ও অন্য চিত্র |
 |
হরগৌরী |
 |
দুই গোপীসহ কৃষ্ণ |
 |
অভিবাদন |
 |
যুদ্ধ দৃশ্য -১ |
 |
যুদ্ধ দৃশ্য -২ |
 |
কৃষ্ণের জন্ম |
 |
শিশু কৃষ্ণের যমুনা নদী পার |
 |
পুতনা বধ |
 |
বাঁকানো কার্নিসের নিচের কাজ |
 |
প্রতিষ্ঠাফলক |
 |
কুলুঙ্গির মধ্যের কাজ - ১ |
 |
কুলুঙ্গির মধ্যের কাজ - ২ |
 |
কুলুঙ্গির মধ্যের কাজ - ৩ |
 |
কুলুঙ্গির মধ্যের কাজ - ৪ |
 |
কুলুঙ্গির মধ্যের কাজ - ৫ |
 |
কুলুঙ্গির মধ্যের কাজ - ৬ |
 |
কুলুঙ্গির মধ্যের কাজ - ৭ |
 |
মন্দিরের কোনাচ |
 |
পূর্ব দিকের দেওয়ালে খিলানের উপরের কাজ |
 |
গর্ভগৃহের দরজার খিলানের উপরের কাজ |
--------------------------------------------------------------
রামায়ণের ৭টি খণ্ডের ৬৪ টি উপাখ্যান ও ১৮৫ টি টেরাকোটা ফলকের আলোকচিত্র সংবলিত আমার লেখা এবং 'রা প্রকাশন' কর্তৃক প্রকাশিত বই 'বাংলার টেরাকোটা মন্দিরে রামায়ণ' প্রকাশিত হয়েছে।
বইটি ডাক যোগে সংগ্রহ করতে হলে যোগাযোগ করুন : 9038130757 এই নম্বরে। কলকাতার কলেজস্ট্রিটের মোড়ে দুই মোহিনীমোহন কাঞ্জিলালের কাপড়ের দোকানের মাঝের রাস্তা ১৫, শ্যামাচরণ দে স্ট্রিটের উপর অবস্থিত বিদ্যাসাগর টাওয়ারের দু'তলায় 'রা প্রকাশনে'র দোকান। ওখান থেকে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। কোনও অসুবিধা হলে উপরোক্ত নম্বরে ফোন করতে পারেন।
--------------------------------------------------------------