Pages

মঙ্গলবার, ৯ আগস্ট, ২০১৬

Pratapeshwar Temple, Rajbari Temple Complex, Ambika Kalna, Purba Bardhaman


প্রতাপেশ্বর  দেউল, রাজবাড়ি  মন্দির  চত্বর, অম্বিকা কালনা, বর্ধমান 

                    শ্যামল কুমার ঘোষ 

            অম্বিকা  কালনার  ১০৮ শিবমন্দিরের  বিপরীত  গেট  দিয়ে  রাজবাড়ি  মন্দির  চত্বরে  ঢুকে  বাঁদিকের  কামান  পেরিয়ে  একটু  এগুলেই  প্রথমেই  পড়বে  টেরাকোটা  কারুকার্যমণ্ডিত  প্রতাপেশ্বর  দেউল-মন্দির।  কেউ  এটিকে  জলেশ্বরের  মন্দির বলেছেন।  আবার  কেউ  বলেছেন  প্যারীকুমারী  মঠ।  এর  সমান্তরাল  খাঁজকাটা  গম্বুজাকৃতি  শিখর  ও  নিচের  দেওয়ালের  চারপাশের  প্রতিটি  স্থানে  ছোট  ছোট  অসংখ্য  টেরাকোটা-ফলক  সমৃদ্ধ  এই  দেউল  সত্যই  শিল্পীর  এক  অনাবদ্ধ  সৃষ্টি।  এই  মন্দিরের  স্থপিতি-শিল্পী  ছিলেন  বাঁকুড়া  জেলার  সোনামুখীর  মন্দির-সূত্রধর  রামহরি  মিস্ত্রি।  তিনি  সোনামুখীর  প্রসিদ্ধ  শ্রীধরজী'র  পঁচিশচূড়া  মন্দিরও   নির্মাণ  করেন।  প্রতাপেশ্বর  দেউল  ১৭৭১  শকাব্দে  বা  ১৮৪৯  খ্রীষ্টাব্দে  রাজকুমার  প্রতাপচন্দ্রের  মহিষী  প্যারীকুমারী  দেবী  প্রতিষ্ঠা  করেন।  প্রসঙ্গতঃ  উল্লেখযোগ্য,  কালনা  শহরে  রাজকুমার  প্রতাপচাঁদের  অন্তর্ধান  হয়  এবং  জাল  প্রতাপচাঁদের  নামে  যে  ফৌজদারী  মামলা  হয়  সেই  ঘটনার  সূত্রপাত  এখানেই  হয়।   

            উঁচু  ভিত্তিবেদির  উপর  স্থাপিত,  পূর্বমুখী,  উড়িষ্যারীতির  শিখর  দেউলের  প্রাচীন  রীতির  পরিবর্তিত  ও  সরলীকৃত  রূপ  এটি।  গর্ভগৃহে  একটি  মাত্র  দরজা,  পূর্ব  দিকে।  বাকি  তিনদিকে  আছে  ভরাট  করা  দরজা।  আয়তন  ১৫ ফুট ( ৪.৫৭ মি. )  X  ১৫ ফুট ( ৪.৫৭ মি. )। উচ্চতা  প্রায়  ৪৫ ফুট (১৩.৭ মি. )। এর  চারদিকেই  রয়েছে  খুব  ছোট  পরিসরের  ঢাকা  বারান্দা। গর্ভগৃহে  কষ্টিপাথরের  শিবলিঙ্গ  নিত্যপূজিত।  উচ্চতা  প্রায়  ৪ ফুট  ৬ ইঞ্চি ( ১৩৭ সেমি )।  

            মূর্তি  ও  নকশাগুলির  মধ্যে  সূক্ষ্ম  কারুনৈপুণ্যের  পরিচয়  না  মিললেও  বিষয়বস্তুর  বৈচিত্র,  মূর্তিগুলির  সজীবতা,  সাজপোশাক  ও  সহজ-সরল  অঙ্গভঙ্গিমা  সহজেই  দর্শকদের  দৃষ্টি  আকর্ষণ  করে।  উল্লেখযোগ্য  টেরাকোটাগুলি,  মন্দিরে  প্রবেশ  পথের  মাথায়  রয়েছে  রামসীতার  অভিষেক।  নিচে  বাদ্যবন্দনা।  উত্তর  দিকের  কৃত্রিম  দ্বারের  মাথায়  আছে  লঙ্কাযুদ্ধ।  যুদ্ধে  সিংহবাহিনী  দুর্গার  আবির্ভাব।  রাবণের  পাশে  নগ্না  নারীমূর্তি।  অন্য  দিকে  বানর  সৈন্য।  নিচে রণবাদ্য।  পশ্চিম  দিকে  কৃত্রিম  দ্বারের  মাথায়  রয়েছে  কীর্তনদলসহ  'গৌড়-নিতাই'  মূর্তি।  আর  দক্ষিণ  দিকে  রয়েছে   রাধাকৃষ্ণ  ও  ললিতা-বিশাখা।  অন্যান্য  টেরাকোটা  কাজের  মধ্যে  আছে  দলবদ্ধ  বিদেশিনী,  বেহালা বাদিকা,  কালী,  রাধাকৃষ্ণলীলাদৃশ্য,  অশ্বারোহী  যোদ্ধা,  ঝালওয়ালা,  বাতায়নে  মহিলা,  সখীদ্বয়ের  মাঝে  শ্রীকৃষ্ণ,  জগন্নাথ,  শিব,  মহিষমর্দিনী ( ভগ্নপ্রায় ),  তীরন্দাজ,  বীণাবাদক,  গড়গড়ার  নল  হাতে  এক  সম্ভ্রান্ত  ব্যক্তি,  ঘোড়-সওয়ার,  মালাজপরত  বৈষ্ণব  সাধু  ও  ফুলকারি  নকশা  ইত্যাদি।  এই  মন্দিরে  বিদেশিনী  মহিলার  অনেক  ফলক  আছে।  ঢাকা  বারান্দার  মূর্তিগুলো  সবই  নষ্ট  হয়ে  গেছে।
  বর্ধমান  রাজ  পরিবারের  প্রতিষ্ঠিত  এটিই  সর্বশেষ  মন্দির  বলা  যায়।
রাম-রাবণের যুদ্ধের মাঝে দুর্গার আবির্ভাব

প্রতাপেশ্বর মন্দির, কালনা 

মন্দিরে রাতের আলোক-সজ্জা

মন্দিরের নিচের দেওয়াল

রামসীতার অভিষেক, নিচে বাদ্য-বন্দনা

সিংহাসনে উপবিষ্ট রামসীতা 

বাদ্য-বন্দনা

পশ্চিম দিকের দেওয়াল

কীর্তনদলসহ 'গৌড়-নিতাই' - ১

কীর্তনদলসহ 'গৌড়-নিতাই' - ২

উত্তর দিকের দেওয়াল

রাম-রাবণের যুদ্ধের মাঝে দুর্গার আবির্ভাব - ১

রাম-রাবণের যুদ্ধের মাঝে দুর্গার আবির্ভাব - ২

রাধাকৃষ্ণ ও ললিতা-বিশাখা

জগন্নাথ ও অন্যচিত্র

কৃষ্ণ ও দুই সখি

কালী

শিব

ষড়ভুজ গৌরাঙ্গ - ১

ষড়ভুজ গৌরাঙ্গ - ২


ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর

গৌড়-নিতাই  ও অন্য মূর্তি

রাধাকৃষ্ণলীলাদৃশ্য -১

রাধাকৃষ্ণলীলাদৃশ্য -২

রাধাকৃষ্ণলীলাদৃশ্য -৩

গড়গড়ার নল হাতে এক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি  

বাতায়নে মহিলা

 ঝালওয়ালা

মালাজপরত সাধু

বেহালা বাদিকা

ফরসি হাতে সভ্রান্ত ব্যক্তি 

তীরন্দাজ 

টেরাকোটা চিত্র -১ 

ঘোড়-সওয়ার ও  অন্য চিত্র

বীণাবাদক ও অন্য চিত্র

দুই মহিলা
ছেলে  কাঁকে  মহিলা
প্রসাধনরতা মহিলা ও অন্য চিত্র 

ফুলকারি নকশা

চার অবতার

বরাহ-বামন অবতার ও অন্যান্য চিত্র 

ছয় মহিলা 

টেরাকোটা চিত্র - ২

টেরাকোটা চিত্র - ৩

টেরাকোটা চিত্র - ৪

টেরাকোটা চিত্র - ৫

টেরাকোটা চিত্র - ৬

টেরাকোটা চিত্র - ৭

টেরাকোটা চিত্র - ৮

টেরাকোটা চিত্র - ৯

টেরাকোটা চিত্র - ১০

টেরাকোটা চিত্র - ১১

ছয় মহিলা 

টেরাকোটা চিত্র - ১২

টেরাকোটা চিত্র - ১৩

টেরাকোটা চিত্র - ১৪

টেরাকোটা চিত্র - ১৫

টেরাকোটা চিত্র - ১৬

শিব পুজো - ১

শিব পুজো - ২

টেরাকোটা চিত্র - ১৭

প্রতাপেশ্বর  শিবলিঙ্গ

            অম্বিকা  কালনার  এই  মন্দিরে  যেতে  হলে  শিয়ালদহ  থেকে  সকাল  ৮ টা  ৬ মিনিটের  কাটোয়া  লোকাল  বা  হাওড়া  থেকে  কাটোয়া  লোকাল  ধরুন।  ব্যাণ্ডেল  থেকেও  অম্বিকা  কালনা  যাওয়ার  গাড়ি  পাবেন।  স্টেশন  থেকে  রিকশা  বা  টোটোতে  মন্দিরে  পৌঁছে  যান।  নদিয়া  জেলার  শান্তিপুর  থেকেও  গঙ্গা  পেরিয়ে  কালনায়  যেতে  পারেন।

            মন্দিরটি  পরিদর্শনের  তারিখ : ০১.০৭.২০১৬

 
       সহায়ক  গ্রন্থাবলি  :
                 ১) কালনা  মহকুমার  প্রত্নতত্ত্ব   ও  ধর্মীয়  সংস্কৃতির  ইতিবৃত্ত    বিবেকানন্দ  দাস 
                 ২)  বাংলার  মন্দির  স্থাপত্য  ও  ভাস্কর্য  :  প্রণব  রায়        

                                                             ******

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন