জোড়া শিব মন্দির, পাল চৌধুরী বাড়ি, রানাঘাট, নদিয়া
শ্যামল কুমার ঘোষ
নদিয়া জেলার মহকুমা শহর রানাঘাট। রানাঘাটের জমিদারদের অন্যতম 'পাল চৌধুরী' বংশ। 'পাল চৌধুরী' নদিয়ারাজ কর্তৃক প্রদত্ত উপাধি। এই বংশের পূর্বপুরুষ কৃষ্ণ চন্দ্র পান্তি অতি সাধারণ অবস্থা থেকে নিজের চেষ্টায় প্রচুর ভূসম্পত্তির অধিকারী হন। কথিত আছে, একবার আড়ংঘাটার যুগলকিশোর মন্দিরের ধানের গোলা আগুনে পুড়ে গেলে কৃষ্ণ পান্তি খুব কম দামে ওই গোলা কিনে নেন। কৃষ্ণ পান্তি ওই ধান বিক্রি করে প্রচুর লাভ করেন। কারণ গোলার ধান উপরের দিকের সামান্যই পুড়ে ছিল, কিন্তু নিচের ধান ভালই ছিল। সেই থেকেই তাঁদের বিপুল বৈভবের শুরু। যশোরের অন্তর্গত সাঁতোরে তাঁদের জমিদারি ছিল। স্কুল প্রতিষ্ঠা ও অন্যান্য কাজে পাল চৌধুরীদের অনেক অবদান আছে।
রানাঘাটের পাল চৌধুরী বাড়ির এলাকার মধ্যে একই ভিত্তিবেদির উপর, অলিন্দ বিহীন, দক্ষিণমুখী, একজোড়া আটচালা শিবমন্দির আছে। মন্দিরদুটির একটি করে প্রবেশপথ। উভয় প্রবেশপথের খিলান পত্রাকৃতি অর্থাৎ খিলানের নিচের প্রান্ত ছোট ছোট অর্ধবৃত্তাকারে ঢেউখেলানো। মন্দির দুটির শুধু সামনের দেওয়ালে পোড়ামাটির অলংকরণ আছে। উভয় শিব মন্দিরের প্রবেশদ্বারের খিলানের নিচের প্রান্ত বরাবর আছে বারটি করে প্রতীক শিবমন্দির এবং তার মধ্যে শিবলিঙ্গ। পূর্ব দিকের মন্দিরটিতে দুই সারি ছোট ছোট কুলুঙ্গির মধ্যে পোড়ামাটির মূর্তি আছে, কিন্তু পশ্চিম দিকের মন্দিরটিতে মাত্র এক সারি কুলুঙ্গি আছে। মন্দিরে পোড়ামাটির দশভুজা, মকর, কৃষ্ণ, হংসসারি, বিভিন্ন দেব-দেবী, ফুলকরি নকশা, বড় ফুল, পাখি, বানর ও নারীমূর্তি আছে।
কৃষ্ণচন্দ্র পান্তির অনুজ শম্ভুচন্দ্র আনুমানিক ১৮০২ খ্রীস্টাব্দে মন্দিরদুটি নির্মাণ করেন বলে জানা যায়। বর্তমানে জীর্ণ হলেও সাবেক টেরাকোটা কারিগরি উচ্চ শ্রেণীর ছিল বলে মনে হয় না। সংস্কারের সময় রঙিন কলিচুনের প্রলেপে টেরাকোটা শিল্প অনেকটাই ম্লান হয়েছে। অনেকগুলি মূর্তি ভেঙ্গেও গেছে। দুটি মন্দিরেই কষ্টিপাথরের শিবলিঙ্গ নিত্যপূজিত। মন্দিরদুটি লোহার গ্রিল দিয়ে ঘেরা।
|
জোড়া শিবমন্দির, রানাঘাট |
|
পশ্চিম দিকের মন্দিরের খিলানের উপরের কাজ |
|
পূর্ব দিকের মন্দিরের খিলানের উপরের কাজ |
|
কৃষ্ণ |
|
হংসসারি ও দশভুজা মূর্তি |
|
নারীমূর্তি |
|
হংসশ্রেণী ও অন্যান্য মূর্তি |
|
মকর মূর্তি ও অন্যান্য নকশা |
|
পাখি, মকর ও অন্যান্য টেরাকোটা মূর্তি |
|
কুলুঙ্গির মধ্যের মূর্তি ও অন্যান্য নকশা |
|
কুলুঙ্গির মধ্যের মূর্তি |
রানাঘাটের জোড়া শিবমন্দিরে যেতে হলে শিয়ালদহ থেকে লালগোলা পাসেঞ্জার, রানাঘাট, শান্তিপুর, গেদে বা কৃষ্ণনগর লোকালে উঠুন। নামুন রানাঘাটে। স্টেশন থেকে রিকশায় বা টোটোতে পৌঁছে যান পাল চৌধুরী বাড়ি। রানাঘাট থেকে কৃষ্ণনগর, লালগোলা, শান্তিপুর, গেদে, বনগাঁ ও শিয়ালদেহের ট্রেন পাওয়া যায়। ৩৪ নং জাতীয় সড়ক ধরেও রানাঘাট যেতে পারেন। শিয়ালদহ থেকে রানাঘাট যেতে ট্রেনে সময় লাগে দু ঘন্টা।
মন্দির দুটি পরিদর্শনের তারিখ : ০৩.০৩.২০১৬
সহায়ক গ্রন্থাবলি :
১. নদিয়া জেলার পুরাকীর্তি : মোহিত রায় ( তথ্য সংকলন ও গ্রন্থনা )
২. Nadia Gazetteer - Chapter XVI
-------------------------------------------
আমার ইমেল : shyamalfpb@gmail.com প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন।
--------------------------------------------
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন