Pages

সোমবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৫

Madangopal Temple, Birohi,Nadia

    

মদনগোপাল  মন্দির,  বিরহী,  নদিয়া   

                               শ্যামল  কুমার  ঘোষ                         

          শিয়ালদহ-রানাঘাট  রেলপথের  একটি  স্টেশন  মদনপুর।  মদনপুর  স্টেশনের  পূর্ব  দিকে  ৬  কি. মি.  দূরের  একটি  গ্রাম  বিরহী।  এই  বিরহী  গ্রামে  মজা  নদী  যমুনার  তীরে  মদনগোপালের  একটি  দালান  মন্দির  আছে। মন্দিরের  মদনগোপালের  বিগ্রহ  বেশ  প্রাচীন।  বহুকাল  আগে  এক  অজ্ঞাতনামা  বৈষ্ণব  এই  গ্রামের  বাঁধানো  একটি  বটগাছের  তলায়   মদনগোপালের  আরাধনা  করতেন। উক্ত  ভক্ত  সাধক  দেহত্যাগ  করলে  তাঁর  ভক্তগণ  গ্রামে  মদনগোপালের  বিগ্রহ  স্থাপন  করেন।  পরে,  কোন  এক  সময়ে  নদিয়ারাজ  কৃষ্ণচন্দ্রের  পৃষ্টপোষকতায়  মদনগোপালের  এই দালান  মন্দিরটি  নির্মিত  হয়।  বহুবার  সংস্কার  হওয়া  এই  মন্দিরটি   আড়াই  শ  বছরেরও  বেশি  পুরানো।  মন্দিরটি  উঁচু  ভিত্তিবেদির  উপর  স্থাপিত।  মন্দিরের  গর্ভগৃহ  ও  সংলগ্ন  দালানের  মেঝে  শ্বেতপাথর  দিয়ে  তৈরী।  মন্দিরে  একটি  কাঠের  সিংহাসনে  কাঁঠালকাঠের  বংশীধারী  মদনগোপাল  ও  নিমকাঠের  রাধিকার  মূর্তি  আছে।  এছাড়া  বলরাম, রেবতী  ও  জগন্নাথের  তিনটি  কাঠের  তৈরী  মূর্তি  ও  একটি  ছোট  বিষ্ণু  মূর্তি  আছে।  মন্দিরের   কাঠের  দরজায়  সুন্দর  মূর্তি  ও  নকশা  রঙের  প্রলেপে  এখন  অনেকটাই  ম্লান।  সম্প্রতি মন্দিরের  সামনে  একটি  নাটমন্দির  নির্মিত  হয়েছে। মহারাজ  কৃষ্ণচন্দ্র  মদনগোপালের  সেবার  জন্য  ১৫০  বিঘা  লাখেরাজ  জমি  দান  করেছিলেন।  সে  জমির  খুব  সামান্য  অংশই  এখন   মন্দির  কর্তৃপক্ষের  হাতে  আছে। 

          নদিয়া  জেলার  রাজা  কৃষ্ণচন্দ্রের  রাজ্যের  মধ্যে  বারটি  প্রসিদ্ধ  কৃষ্ণ  বিগ্রহ  আছে।  বিরহীর  মদনগোপাল  ও  বলরাম   ওই  বারটি  বিগ্রহের  দুটি  বিগ্রহ।  অন্যান্ন  বিগ্রহগুলি  হল,  অগ্রদ্বীপের  গোপীনাথ,  তেহট্টের  কৃষ্ণরায়  প্রভৃতি।  বারোদোলের  সময়  এই  বিগ্রহগুলির  সঙ্গে  মদনগোপাল  ও  বলরাম  কৃষ্ণনগর  রাজবাড়িতে  যান  এবং  একমাস  পরে  পুনরায়  বিরহীতে  ফিরে  আসেন। ( আমার  লেখা  বারোদোল  মেলা  দেখুন। )

            বারোদোল  মেলা,  কৃষ্ণনগর,  নদিয়া     

          মন্দিরে  নিত্য  পূজা  ছাড়াও  ভাইফোঁটার  দিন  মদনগোপালের  বিশেষ  পূজা  হয়  এবং  মন্দির-প্রাঙ্গণে  বিরাট  মেলা  বসে।  মেলাটি  চার  শ  বছরেরও  বেশি  প্রাচীন  বলে  দাবি  করা  হয়।   এছাড়া  দোল  ও  জন্মাষ্টমী  উপলক্ষে  বিশেষ  উৎসব  পালন  করা  হয়।   গ্রামে  মন্দিরের  একটু  দূরে  একটি  দোলমঞ্চ  আছে।  দোলের  সময়  বিগ্রহ  ওই  মঞ্চে  রেখে  দোল   উৎসব  পালন  করা  হয়।  আগে  ভাইফোঁটার  দিন  মেয়েরা  জাতিধর্মনির্বিশেষে   মদনগোপালের   উদ্দেশে   মন্দিরের   দেওয়ালে  ফোঁটা  দিতেন।  কিন্তু  এখন  সে  রেওয়াজ  অনেকটা  কমে গেছে। দেবতাকে  ভাই  হিসাবে  আরাধনা  করা  বা  ভাইফোঁটা  উপলক্ষে  মেলা  আর  কোথাও  দেখা  যায়  না। স্থানীয়  লোকেদের  বিশ্বাস  মদনগোপালের  আশীর্বাদেই   তাঁদের  ফসল  ভাল  হয়।  তাই  সব  ধর্মের  গ্রামবাসীরা  গাছের  প্রথম  ফল  বা  উৎপন্ন  ফসল  মদনগোপালকে  প্রথমে  নিবেদন  করেন।


          মদনগোপাল  প্রথমে  একক  ছিলেন।  কথিত  আছে,  মন্দিরের  পুজারী  এক  রাতে   স্বপ্নে  দেখলেন  মদনগোপাল  তাঁকে   যেন  বলছেন,  ' বহুদিন  বৃন্দাবন  ছেড়ে  এসেছি,  রাধিকা  বিরহে  দিন  কাটছে।  যমুনা  নদীতে  একখণ্ড  নিমকাঠ  ভেসে  আসছে, সেই  কাঠে  রাধিকা  মূর্তি  তৈরী  করে  আমার  মন্দিরে  প্রতিষ্ঠা  কর।'  কয়েক  দিনের  মধ্যে   সত্য  সত্যই  যমুনা  নদীতে  একখণ্ড  নিমকাঠ  ভেসে  এল।  তখন  নদিয়ারাজ  কৃষ্ণচন্দ্রের  রাজত্বকাল।  কৃষ্ণচন্দ্রের  কানে  এই   সংবাদ  পৌঁছতেই  তিনি  শিল্পী  ডেকে  ঐ  কাঠ  দিয়ে  রাধিকা  মূর্তি  তৈরী  করিয়ে  মন্দিরে  মদনগোপালের  পাশে  প্রতিষ্ঠা  করলেন।  কৃষ্ণচন্দ্র  দেবসেবার  জন্য  নদীর  অপর  পারের  একটি  গ্রাম  দেবোত্তর  করে  দিলেন।  ভোগের  চাল  ঐ  গ্রাম  থেকে  আসত  বলে  গ্রামের  নাম  হল  ভোগের  পাড়া।   মদনগোপাল  এই  গ্রামে  এসে  প্রথমে  রাধিকার  বিরহে  কাতর  ছিলেন  বলে  গ্রামের  নাম  হয়  বিরহী।  আগে  মন্দিরের  কাছে  অন্যত্র  বীর  হনুমানের  ও  শিবের  দুটি  পাথর  ছিল।  বর্তমানে  পাথরদুটি  মন্দিরের  সামনে  রাখা  হয়েছে।  স্থানীয়  পল্লীবাসীদের  নিয়ে  গঠিত  ' শ্রীশ্রী  মদনগোপাল  মন্দির  পরিচালন  কমিটি '  মন্দিরটি  দেখাশোনার  কাজে  নিয়োজিত।


          বিরহীর  মদনগোপাল  মন্দিরে  যেতে  হলে  শিয়ালদহ  থেকে  সকালের  লালগোলা  প্যাসেঞ্জার, রানাঘাট, শান্তিপুর, গেদে, বা  কৃষ্ণনগর  লোকালে  উঠুন।  নামুন  মদনপুর  স্টেশনে।  রেলগেটের  পূর্বদিকের  রাস্তা  ধরে  একটু  এগিয়ে  অটো  রিকশা  বা  ট্রেকারে  উঠে  পৌঁছে  যান  মন্দিরে।  ৩৪ নং  জাতীয়  সড়ক  ধরেও  যেতে  পারেন।  মনে  রাখবেন,  দুপুরে  মন্দির  বন্ধ  থাকে।

            মন্দিরটি  পরিদর্শনের  তারিখ : ১২.১০.২০১৫


মদনগোপাল  মন্দির

মদনগোপাল  ও  অন্যান্য  বিগ্রহ

মদনগোপাল  ও  রাধিকা  বিগ্রহ

বলরাম, রেবতী  ও  জগন্নাথ  বিগ্রহ

মন্দিরের  কাঠের  দরজার  নকশা 

নবনির্মিত  নাটমন্দির 

দোলমঞ্চ

কৃষ্ণনগরের বারোদোল মেলায় বলরাম ও রেবতী বিগ্রহ 

কৃষ্ণনগরের বারোদোল মেলায় মদনগোপাল, রাধিকা ও জগন্নাথ বিগ্রহ

 
সহায়ক  গ্রন্থাবলি  :
        ১. পশ্চিমবঙ্গের পূজা-পার্বণ  ও  মেলা ( ৩ য়  খণ্ড  ) :  অশোক  মিত্র  সম্পাদিত 
        ২.  নদিয়া  জেলার  পুরাকীর্তি মোহিত  রায়  (তথ্য-সংকলন  ও  গ্রন্থনা )   

             -------------------------------------------
            আমার  ইমেল :  shyamalfpb@gmail.com   প্রয়োজনে  যোগাযোগ  করতে  পারেন।

           --------------------------------------------                                             

৬টি মন্তব্য:

  1. বিগ্রহ কী কদম কাঠের হয় ??
    আমি জানাতাম নিমকাঠের কৃষ্ণ বিগ্রহ হয়

    দয়া করে বলবেন ??

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. এখানে মদনগোপালের বিগ্রহ কাঁঠালকাঠের এবং রাধিকার মূর্তি নিমকাঠের।

      মুছুন
  2. present pujari is a brahmachari named Biswambar has devoted himself for years together worships deities therein. Madangopal and Radharani deities looks attractive.Brahmachar Biswambar says these deities are rare in India.







    উত্তরমুছুন
  3. I saw it today ,i.e. on 29/10/2019 the day of bhaiphota..It looks beautiful. I went their by bus from Kolkata to north Bengal and get down at Birohi(District: Nadia, West Bengal). The temple is just five minutes away on walk. There were arrangement of bhog (prasadam) for everyone present. The lively images(deities) of Madangopal & Radharani made of wood are actually very rare to find in anywhere in India. The Temple and The so called Jamuna Ghat are also beautiful. I observed that mela has lost its vigour, owing to present day mall culture. I returned Kolkata by an EMU train from Madanpur Railday Station.

    উত্তরমুছুন