Pages

শনিবার, ২১ মার্চ, ২০১৫

Krishnarai Temple, Kanchanpally, Rathtala, Kalyani,Nadia


কৃষ্ণরাই  মন্দির,  কাঞ্চনপল্লী,  কল্যাণী  রথতলা,  নদিয়া  

শ্যামল  কুমার  ঘোষ 


            শিবনিবাসের  কৃষ্ণচন্দ্রীয়  মন্দির  স্থাপত্যরীতি  অনুসরণ  করেই  ১৭৮৬ সালে রথতলার  কাঞ্চনপল্লীতে  কৃষ্ণরাইয়ের  মন্দির  নির্মিত  হয়েছিল। মন্দিরটি  বাংলার  অন্যতম  বৃহৎ  আটচালা মন্দির। মন্দিরে লাগানো  প্রস্তরফলক  থেকে জানা যায়  যে  ইং  ১৭৮৬  সালে ( ১৭০৮ শকাব্দ ) কলকাতা  নিবাসী  ধর্মপ্রাণ  নয়নচাঁদ  মল্লিক  ও  তাঁর  পুত্র  গৌর  চরণ  মল্লিক  এই  মন্দির  নির্মাণ  করেন।  পরে  নিমাই চরণ  মল্লিক  ইং  ১৮৩৭  সালে  বিগ্রহের  নিত্য  সেবার  স্থায়ী  বন্দোবস্ত  করেন। 
     
            মন্দিরটি  উঁচু  ভিত্তিবেদির  উপর  স্থাপিত।  আবৃত  অলিন্দে  নক্সাকরা  খিলানযুক্ত  তিনটি  প্রবেশদ্বার বৃহদাকার  স্তম্ভের  উপর  স্থাপিত। স্তম্ভগুলিও  কাজকরা।  দু'টি  জানলার  খিলানও নক্সাকরা।  গর্ভগৃহের কাঠের  দরজায়  খোদিত  দশাবতার মূর্তি ও  অপূর্ব  সুন্দর  লতাপাতার শিল্পকর্ম  মুগ্ধ  হয়ে দেখতে  হয়। মন্দিরটি  বিস্তির্ণ  প্রাঙ্গণযুক্ত।  বৃহৎ  দরজা  ও  নহবৎখানা  পেরিয়ে  মন্দিরের  ভিতর  প্রবেশ  করতে  হয়।  প্রশস্ত  প্রাঙ্গনের  চারপাশ  পাঁচিল  দিয়ে  ঘেরা। গর্ভগৃহে  বিগ্রহ  একটি  সিংহাসনে  আসীন। বিগ্রহটি  পূর্বে  চৈতন্যদেবের  অন্তরঙ্গ  ভক্ত  শিবানন্দ  সেনের ছিল।  সতের  শতকের  গোড়ার  দিকে  মহারাজ  প্রতাপাদিত্যের  খুল্লতাতপুত্র  কচু  রায়  গঙ্গাতীরে  কৃষ্ণরাইয়ের একটি মন্দির  নির্মাণ  করান।  সেই মন্দিরটি  কালক্রমে  গঙ্গাবক্ষে  নিমজ্জিত  হয়। তখন  পূর্বোক্ত  ঐ দুই  ব্যক্তি  ১৭৮৬  সালে বর্তমান  মন্দিরটি  নির্মাণ  করান। 
 
            বর্তমানে  'সেন  শিবানন্দ  শ্রীপাট ' সেবায়ত  সমিতি মন্দিরের  দেখাশোনার  কাজে  নিয়োজিত।  মন্দিরটির  সংস্কারের  প্রয়োজন।

            মন্দিরটিতে  যেতে  হলে  শিয়ালদহ  স্টেশন  থেকে  কল্যাণী  লোকালে  উঠে  কল্যাণী  ঘোষপাড়া  স্টেশনে  নামতে  হবে। স্টেশনে  নেমে  ITI  মোড়  থেকে  কাঁচরাপাড়া  গামী  ২৭  নং  বাসে  উঠে  রথতলায়  নামতে  হবে।  বাস  স্টপেজের  অনতিদূরেই  মন্দির । মন্দিরটি  দুপুরে  বন্ধ  থাকে।


মন্দিরের  সামনের  প্রান্তর 
 
কৃষ্ণরাই  মন্দির,  কাঞ্চনপল্লী,  রথতলা,  কল্যাণী - ১

কৃষ্ণরাই  মন্দির,  কাঞ্চনপল্লী,  রথতলা,  কল্যাণী - ২

মন্দিরের  সামনের  ত্রিখিলান  বিন্যাস 

ডান  দিকের  খিলানের  উপরের  কাজ 

একটি  স্তম্ভের  কাজ 

প্রতিষ্ঠাফলক  ও  দুটি  ফুল 

গর্ভগৃহের  খিলানের  উপরের  কাজ 

গর্ভগৃহে  সিংহাসনে  আসীন  কৃষ্ণরাই  ও  রাধিকা 

কৃষ্ণরাই  ও  রাধিকা  বিগ্রহ - ১

কৃষ্ণরাই  ও  রাধিকা  বিগ্রহ - ২

মন্দিরের  দরজার  কাঠের  কাজ - ১

মন্দিরের  দরজার  কাঠের  কাজ - ২

মন্দিরটি  পরিদর্শনের  তারিখ :  ২৬.০২.২০১৫


     সহায়ক গ্রন্থ / প্রবন্ধ :
              ১.  ইতিহাসের  রূপরেখায়  নদিয়া  ও  নদিয়ার  পুরাকীর্তি ( প্রবন্ধ ) :  মোহিত  রায় ,পশ্চিমবঙ্গ,  নদিয়া  জেলা  সংখ্যা , ১৯৯৭
              ২. বাংলার  মন্দির  স্থ্যাপত্য  ও  ভাস্কর্য  :  প্রণব  রায়

              ----------------------------------------

রামায়ণের ৭টি খণ্ডের ৬৪ টি উপাখ্যান ও ১৮৫ টি টেরাকোটা ফলকের আলোকচিত্র সংবলিত আমার লেখা এবং 'রা প্রকাশন' কর্তৃক প্রকাশিত বই 'বাংলার টেরাকোটা মন্দিরে রামায়ণ' প্রকাশিত হয়েছে। বইটির মুদ্রিত মূল্য - ৫৯৯ টাকা।


 বইটি ডাক যোগে সংগ্রহ করতে হলে যোগাযোগ করুন :  9038130757 এই নম্বরে। 

কলকাতার কলেজস্ট্রিটের মোড়ে দুই মোহিনীমোহন কাঞ্জিলালের কাপড়ের দোকানের মাঝের রাস্তা ১৫, শ্যামাচরণ দে স্ট্রিটের উপর অবস্থিত বিদ্যাসাগর টাওয়ারের দু'তলায় 'রা প্রকাশনে'র দোকান। ওখান থেকে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। কোনও অসুবিধা হলে উপরোক্ত নম্বরে ফোন করতে পারেন।

         প্রকাশনীতে বইটা বেস্টসেলার হয়েছে।



             ----------------------------------------

Palpara Terracotta Temple,Palpara, Nadia

 

পালপাড়া  টেরাকোটা মন্দির,  পালপাড়া 

শ্যামল  কুমার  ঘোষ 

 

             শিয়ালদহ-রানাঘাট  লাইনে  পালপাড়া  একটি  ছোট্ট  স্টেশন।  রেলপথে  শিয়ালদহ  থেকে  দূরত্ব  ৬০ কিমি।   স্টেশন  থেকে  পশ্চিম  দিকে  মাত্র  পাঁচ  মিনিট  হাঁটলে  (দুর্গানগর  তারকদাস  বিদ্যামন্দিরের  পাশে )  দেখতে  পাবেন  একটি  মন্দির।  এটি  সমগ্র  নদিয়া  জেলার  একটি  প্রাচীন  মন্দির।  মন্দিরটি  ' চারচালা ' রীতিতে  নির্মিত।  প্রতিষ্ঠাফলক  না  থাকায়  সঠিক  নির্মাণকাল  জানা যায়  না।  তবে , সতের  শতকের  কোনও এক  সময়ে  নির্মিত  বলে  অনুমিত  হয়।  মন্দিরটির  ভিতরের  ছাদ  গম্বুজাকৃতির , কাজেই  এটি  মুসলিম  পরবর্তীকালের। মন্দিরটি  জনৈক  গন্ধর্ব  রায়ের  প্রতিষ্ঠিত  বলে  অনেকে  মনে  করেন।
 
             দক্ষিণমুখী  এই  মন্দিরটি একটি  উচ্চ  ভিত্তিবেদির  উপর স্থাপিত। মূল মন্দিরটি  আয়তকার  প্রস্থচ্ছেদের ,  উচ্চতা  আনুমানিক  ১২  মিটার। ইঁট  নির্মিত মন্দিরটির  কোন  আবৃত  অলিন্দ  নেই।  দুটি  প্রবেশ দ্বার , একটি  সামনের  দেওয়ালে ,অপরটি  পূর্ব  দিকের দেওয়ালে। সামনের  প্রবেশদ্বারের  দু'পাশে দু'টি  ছোট  ছোট  থাম  ও একটি  কারুকাজ করা  খিলান  আছে।  সামনের  দেওয়ালে,  বিশেষত:  প্রবেশদ্বারের  ডাইনে-বাঁয়ে-উপরে  পোড়ামাটির সূক্ষ্ম  কাজ  দ্বারা  অলংকরণ  করা  হয়েছে। সবচেয়ে  উল্লেখযোগ্য  রাম-রাবনের  যুদ্ধদৃশ্য।  বাঁ  দিকে  রামচন্দ্র  তিরধনুক হাতে  তাঁর  সামনে,  ডানদিকে  দন্ডায়মান  দশাননকে  আক্রমনোদ্যত।  দশাননের  পিছনে  মুষলহাতে  ভীষণাকৃতি  এক  রাক্ষস  ও  পরস্পর  সম্মুখযুদ্ধেরত  অনেকগুলি  দৃশ্য। তোরণপথটির  চারিদিকে  অনেকগুলি  দু' মুখো  সাপ ( ভিন্ন  মতে  ড্রাগন )  আছে।  বাম  ও  ডান  দিকের  উপরে- নিচে,  কার্নিসের  নিচে  অনেকগুলি  টেরাকোটার ছোট-বড়  ফুল  মন্দিরটিকে  সুন্দর  করে তুলেছে। এ ছাড়া নানা  রকম  নকশাও  সামনের  দিককে  শ্রীবৃদ্ধি  করেছে।  পশ্চিম দিকের  দেওয়ালের  পশ্চাদভাগেও  অনেকগুলি  ছোট-বড়  ফুল  আছে।

             ইং  ১৮৯৬  সালে  প্রকাশিত ' List  of  Ancient  Monument  in  Bengal '-এ  মন্দিরটির  তৎকালীন  মালিকরূপে  বাবু  কালীকুমার  চৌধুরীর  নাম  উল্লেখ  করা  হয়েছে।  মন্দিরটি  'ভারতীয়  পুরাতত্ত্ব  সর্বেক্ষণ' কর্তৃক  সংরক্ষিত।  মন্দিরটির  সংস্কার  করা  হয়েছে। 


পালপাড়া  মন্দির ( বাঁ  দিক  থেকে )

পালপাড়া  মন্দির ( ডান  দিক  থেকে )

পালপাড়া  মন্দির ( সামনে   থেকে )

খিলানের  উপরের  টেরাকোটার  কাজ

রামচন্দ্র  তিরধনুক হাতে  দশাননকে   আক্রমনোদ্যত


যুদ্ধরত  দশানন    তাঁর  সেনারা

মন্দিরের  পশ্চাদভাগে  টেরাকোটার  ফুল

একটি  টেরাকোটার  বড়   ফুল

    সহায়ক গ্রন্থ / প্রবন্ধ :

                ১.  ইতিহাসের  রূপরেখায়  নদিয়া  ও  নদিয়ার  পুরাকীর্তি ( প্রবন্ধ ) :  মোহিত  রায় , পশ্চিমবঙ্গ , নদিয়া  জেলা  সংখ্যা , ১৯৯৭
                ২.  বাংলার  মন্দির  স্থ্যাপত্য  ও  ভাস্কর্য  :  প্রণব  রায়
                ৩.  'ভারতীয়  পুরাতত্ত্ব  সর্বেক্ষণ' কর্তৃক  মন্দির  প্রাঙ্গণে লাগানো  ফলক

           ----------------------------------------

রামায়ণের ৭টি খণ্ডের ৬৪ টি উপাখ্যান ও ১৮৫ টি টেরাকোটা ফলকের আলোকচিত্র সংবলিত আমার লেখা এবং 'রা প্রকাশন' কর্তৃক প্রকাশিত বই 'বাংলার টেরাকোটা মন্দিরে রামায়ণ' প্রকাশিত হয়েছে। বইটির মুদ্রিত মূল্য - ৫৯৯ টাকা।


 বইটি ডাক যোগে সংগ্রহ করতে হলে যোগাযোগ করুন :  9038130757 এই নম্বরে। 

কলকাতার কলেজস্ট্রিটের মোড়ে দুই মোহিনীমোহন কাঞ্জিলালের কাপড়ের দোকানের মাঝের রাস্তা ১৫, শ্যামাচরণ দে স্ট্রিটের উপর অবস্থিত বিদ্যাসাগর টাওয়ারের দু'তলায় 'রা প্রকাশনে'র দোকান। ওখান থেকে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। কোনও অসুবিধা হলে উপরোক্ত নম্বরে ফোন করতে পারেন।

         প্রকাশনীতে বইটা বেস্টসেলার হয়েছে।



           -----------------------------------------