Pages

শনিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৩

Kamalakanta Kalibari, Kotalhat, Bardhaman Town

 কমলাকান্ত কালীবাড়ি, কোটালহাট, বর্ধমান শহর

                          শ্যামল কুমার ঘোষ

            সাধক প্রবর কমলাকান্ত প্রতিষ্ঠিত কোটালহাটের কালীবাড়ি 'কমলাকান্তের কালীবাড়ি' নামেই পরিচিত। কমলাকান্ত ভট্টাচার্য সাধক কমলাকান্ত নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। বর্ধমানের মহারাজা   তেজচাঁদ ১২১৬ বঙ্গাব্দে কমলাকান্তকে চান্না থেকে বর্ধমানে নিয়ে এসে তাঁর সভাপণ্ডিত করেন এবং পরে তাঁর শিষ্যত্বও গ্রহণ করেন। মহারাজ তেজচাঁদ কোটালহাটে তাঁকে বারো কাঠা জমি দান করলেন এবং সাধক কমলাকান্তের থাকার বন্দোবস্ত করে দিলেন। সাধক কমলাকান্ত সেখানে খড়ের ছাউনি দিয়ে এক মন্দির নির্মাণ করে মন্দিরে কালীমূর্তি স্থাপন করে আদ্যাশক্তি মহামায়ার সাধনার ক্ষেত্র প্রস্তুত করলেন। মন্দিরের পাশেই পঞ্চমুণ্ডির আসন প্রতিষ্ঠা করলেন। মন্দিরের পিছনে বেলগাছ প্রতিষ্ঠা করে স্থাপন করলেন ভৈরবকে। এই মন্দিরেই তিনি জগজ্জননীর মৃন্ময়ী রূপ থেকে চিন্ময়ী রূপের দেখা পেয়ে ছিলেন।   

            সেকালের খড়ের মন্দির বর্তমানে হয়েছে পাকা দালান শৈলীর মন্দির। মন্দির চত্বর গাছগাছালিতে ভরা। মূল মন্দিরে তিনটি ঘর। মন্দিরের পশ্চিমে ভোগ রান্নার ঘর। গর্ভগৃহের ডান দিকের ঘরটি ছিল সাধকের পঞ্চমুণ্ডির আসন। এই পঞ্চমুণ্ডির আসন যে ঘরে আছে সেই ঘরে সকলকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। এই ঘরে মায়ের একটি ছোট মূর্তি আছে। গর্ভগৃহে রয়েছে একটি বেদি। এর ভিতরে রয়েছে কমলাকান্তের সমাধি। তার উপরে প্রতিষ্ঠিত রয়েছে মা কালীর কষ্টিপাথরের মূর্তি। পূর্বে মূর্তিটি ছিল মৃন্ময়ী। কষ্টিপাথরের মূর্তিটি বেশ বড়ো, চতুর্ভুজা। মন্দিরের সামনে আছে নাটমন্দির। নাটমন্দিরটি নির্মাণ করে দেন বৈদ্যনাথ দে মহাশয়। মায়ের নিত্য পূজা ছাড়াও প্রতি অমাবস্যায় হোম হয়। কার্তিকী অমাবস্যায় ধুমধামের সঙ্গে মায়ের পূজা করা হয়। 'কমলাকান্ত সমিতি' নামে একটি সমিতি মন্দিরের সেবাকার্য পরিচালনা করেন।    

            ভোগরান্না ঘরের পাশেই একটি বাঁধানো কুয়া। এই কুয়ার একটি ইতিহাস আছে। কমলাকান্তের মৃত্যুকাল উপস্থিত হলে মহারাজা তেজচন্দ্র  কমলাকান্তকে গঙ্গাতীরে নিয়ে যেতে চাইলেন। কিন্তু কমলাকান্ত কিছুতেই তাতে রাজি হলেন না। এতে মহারাজ কিছুটা মনঃক্ষুণ্ণ হলেন। কিন্তু সাধকের মৃত্যুর সময় দেখা গেল এক জায়গায় মাটি ভেদ করে গঙ্গার আগমন ঘটেছে। পরবর্তীকালে সেটি বাঁধিয়ে রাখা হয়েছে। 

            এ রকম আরও অলৌকিক কাহিনী ঘটেছিল সাধকের জীবদ্দশায় যা আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। একটি ঘটনা, মহারাজ তেজচন্দ্র তাঁর মদ্যপ পুত্র প্রতাপচাঁদকে ভালো করার জন্য কমলাকান্তের কাছে পাঠিয়ে ছিলেন। কিন্তু একদিন তিনি দেখলেন সাধক নিজেই সুরাপানে মত্ত। রাজা মনে মনে বিরক্ত হলেন। একদিন কমলাকান্ত কমণ্ডলু নিয়ে রাজপ্রসাদে এসেছেন। রাজার ধারণা হল  কমণ্ডলুর মধ্যে সুরা আছে। তাই মহারাজ কমলাকান্তকে জিজ্ঞাসা করলেন, 'ঠাকুর তোমার কমণ্ডলুর মধ্যে কী আছে ?' ভাবের ঘোরে সাধক উত্তর দিলেন, 'দুধ আছে।' তারপর রাজার অবিশ্বাসী চোখ দেখে  কমণ্ডলু থেকে মাটিতে দুধ ঢেলে দেখিয়ে দিলেন। রাজা লজ্জিত হলেন। আর এক দিনের ঘটনা - সাধক কমলাকান্ত মদ্যপ অবস্থায় রাজবাড়িতে এসেছেন মহারাজের কাছে। সাধক প্রকৃতিস্থ কিনা পরীক্ষা করবার জন্য মহারাজ সাধককে জিজ্ঞাসা করলেন, 'গুরুদেব, আজ কী তিথি ?' সাধক ভাবাবেগে উত্তর দিলেন, 'আজ পূর্ণিমা তিথি।' সেদিন ছিল অমাবস্যা। তাই মহারাজ বিরক্ত হয়ে সাধককে বললেন, আজ পূর্ণিমার চাঁদ দেখাতে পারবেন ? সাধক সেদিন মহারাজকে অমাবস্যার রাতে আকাশে পূর্ণ চন্দ্র দেখালেন।

            কমলাকান্ত অনেক শ্যামা সংগীত রচনা করেন। তাঁর রচিত একটি বিখ্যাত শ্যামা সংগীত -

                সদানন্দময়ী কালী, মহাকালের মনোমোহিনী গো মা !

                তুমি আপন সুখে আপনি নাচ, আপনি দেও মা করতালি।।

                আদিভূতা সনাতনী, শূন্যরূপা শশী-ভালী। 

                ব্রহ্মাণ্ড ছিল না যখন হে মা, মুণ্ডমালা কোথায় পেলি।।

                সবে মাত্র তুমি যন্ত্রী, যন্ত্র আমরা তন্ত্রে চলি। 

                তুমি যেমন রাখো তেমনি থাকি, যেমন বলাও তেমনি বলি। 

                অশান্ত কমলাকান্ত বলে দিয়ে গালাগালি -

                এবার সর্ব্বনাশি, ধ'রে অসি, ধর্ম্মাধর্ম্ম দুটোই খেলি।।                   

কষ্টিপাথরের মাতৃমূর্তি - ১

কষ্টিপাথরের মাতৃমূর্তি - ২

কষ্টিপাথরের মাতৃমূর্তি - ৩

কষ্টিপাথরের মাতৃমূর্তি - ৪

পঞ্চমুণ্ডির আসন ঘর

শিবলিঙ্গ 

বাঁধানো কুয়া
                   কী ভাবে যাবেন ?
            কোলকাতা থেকে ট্রেনে বর্ধমান। সেখান থেকে অটোতে মন্দির। কলকাতা থেকে বাসেও বর্ধমান যেতে পারেন।

        সহায়ক গ্রন্থ :
                      ১) নগর বর্ধমানের দেবদেবী : নীরদবরণ সরকার
                      ২) পশ্চিমবঙ্গের কালী ও শক্তি সাধনা : গৌতম বিশ্বাস 
                                              ********

রামায়ণের ৭টি খণ্ডের ৬৪ টি উপাখ্যান ও ১৮৫ টি টেরাকোটা ফলকের আলোকচিত্র সংবলিত আমার লেখা এবং 'রা প্রকাশন' কর্তৃক প্রকাশিত বই 'বাংলার টেরাকোটা মন্দিরে রামায়ণ' প্রকাশিত হয়েছে।


 বইটি ডাক যোগে সংগ্রহ করতে হলে যোগাযোগ করুন :  9038130757 এই নম্বরে। 

কলকাতার কলেজস্ট্রিটের মোড়ে দুই মোহিনীমোহন কাঞ্জিলালের কাপড়ের দোকানের মাঝের রাস্তা ১৫, শ্যামাচরণ দে স্ট্রিটের উপর অবস্থিত বিদ্যাসাগর টাওয়ারের দু'তলায় 'রা প্রকাশনে'র দোকান। ওখান থেকে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। কোনও অসুবিধা হলে উপরোক্ত নম্বরে ফোন করতে পারেন।

বুধবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৩

Temple of Mahamaya, Mahamayatala ( Mahamahapur ), South 24 Parganas

 মহামায়া মন্দির, মহামায়াতলা ( মহামায়াপুর ), দক্ষিণ ২৪ পরগনা

                     শ্যামল কুমার ঘোষ

            গড়িয়া ৫ নম্বর বাসস্ট্যাণ্ডের এক কিমি দক্ষিণে গড়িয়া-বারুইপুর বাস রাস্তায় ২২৮ নম্বর বাসস্ট্যাণ্ড। এই বাসস্ট্যাণ্ডের আগে একটা গলির মধ্যে মহামায়ার মন্দির অবস্থিত। জায়গাটির নাম মহামায়াপুর। কিন্তু লোকমুখে জায়গাটি মহামায়াতলা নামে পরিচিতি লাভ করেছে। 

            উঁচু ভিত্তিবেদির উপর স্থাপিত, দক্ষিণমুখী মূল মন্দিরটি আটচালা শৈলীর। গর্ভগৃহে প্রবেশের দুটি দরজা। একটি দক্ষিণ দিকে,  আর একটি পূর্ব দিকে। মন্দিরের সামনে মন্দিরের সংযুক্ত একটি সমতল ছাদবিশিষ্ট নাটমন্দির ও পূর্ব দিকে একটি সমতল ছাদবিশিষ্ট ভোগ ঘর পরবর্তী কালে নির্মাণ করা হয়েছে।  

             মন্দিরটি আগে ছিল টালির ছাদবিশিষ্ট কাঁচা মন্দির। ১২১০ বঙ্গাব্দে অর্থাৎ ১৮০৩ খ্রিস্টাব্দে রাজপুরের জমিদার দুর্গারাম করচৌধুরী ( ১৭৫৬-১৮১৬ ) স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে পাকা মন্দিরটি তৈরি করে দেন। সাগর চট্টোপাধ্যায় লিখিত 'দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার পুরাকীর্তি' গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে মন্দিরে একটি প্রতিষ্ঠালিপি ছিল। প্রতিষ্ঠালিপির পাঠ ছিল - 'শুভমস্তু শকাব্দ / .... ১২১০ / সন। ..শ্রী দুর্গারাম / কর দাসস্য '। 

           গর্ভগৃহে একটি বেদির উপর নিমকাঠের তৈরি দেবী মহামায়া দণ্ডায়মানা। দ্বিভুজা মূর্তি। দেবীর গায়ের রং হলুদ বর্ণ। মাথায় মুকুট, গায়ে নানা অলঙ্কার। 

            মন্দির প্রাঙ্গন পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। মন্দির চত্বরের এক ধারে একটি বিশাল বটগাছ। বটগাছের গোড়ার চার দিক গোল করে বাঁধানো। গাছের গোড়ায় মনস্কামনায় আশায় রঙিন সুতো জড়ানো। নিত্য পূজা ছাড়াও ২৩ শে জানুয়ারি মা মহামায়ার মহা সমারোহে বাৎসরিক পূজা অনুষ্ঠিত হয়। তাতে বহু মানুষের সমাগম হয়।  

মহামায়া মন্দির 
মন্দিরের শিখর 
মন্দিরের গর্ভগৃহের দৃশ্য 

মা মহামায়া - ১

মা মহামায়া - ২

           
কী ভাবে যাবেন ?
            মেট্রো স্টেশন 'নজরুল' বা গড়িয়া ৫ নম্বর বাস স্ট্যান্ড থেকে বাসে বা টোটোতে মহামায়াতলা যাওয়া যায়। সেখান থেকে হেঁটে মন্দির। এসপ্ল্যানেড বাস স্ট্যান্ড থেকে ২২৮ নম্বর বাসেও  মহামায়াতলা যাওয়া যায়।
                                      ********** 

রামায়ণের ৭টি খণ্ডের ৬৪ টি উপাখ্যান ও ১৮৫ টি টেরাকোটা ফলকের আলোকচিত্র সংবলিত আমার লেখা এবং 'রা প্রকাশন' কর্তৃক প্রকাশিত বই 'বাংলার টেরাকোটা মন্দিরে রামায়ণ' প্রকাশিত হয়েছে।


 বইটি ডাক যোগে সংগ্রহ করতে হলে যোগাযোগ করুন :  9038130757 এই নম্বরে। 

কলকাতার কলেজস্ট্রিটের মোড়ে দুই মোহিনীমোহন কাঞ্জিলালের কাপড়ের দোকানের মাঝের রাস্তা ১৫, শ্যামাচরণ দে স্ট্রিটের উপর অবস্থিত বিদ্যাসাগর টাওয়ারের দু'তলায় 'রা প্রকাশনে'র দোকান। ওখান থেকে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। কোনও অসুবিধা হলে উপরোক্ত নম্বরে ফোন করতে পারেন।

শনিবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৩

Blue Jagannath Temple, Khristian Para, Kestopur ( Krishnapur ), North 24 Parganas

 নীল  জগন্নাথ  মন্দির,  দেবনাথ  বাড়ি,  খ্রিস্টান  পাড়া,  কেষ্টপুর ( কৃষ্ণপুর ), উত্তর  ২৪  পরগনা 

    শ্যামল  কুমার  ঘোষ 

            উত্তর  ২৪ পরগনার  কেষ্টপুরের  খ্রিস্টান  পাড়ায়  আছে  নীল জগন্নাথ  দেবের  মন্দির।  মন্দির  বললে  ভুল  হবে।  দেবনাথ  বাড়ির  একটি  ঘরে  বলরাম-সুভদ্রার  সঙ্গে  একই  আসনে  নীল  রঙের  জগন্নাথ  বিগ্রহ  পূজিত  হন।  সাধারণত  জগন্নাথ  দেবের  বিগ্রহ  কৃষ্ণ  বর্ণের  হয়।  তবে  এখানে  নীল  বর্ণের  কেন ?  এর  উত্তর  পেতে  হলে  বেশ  কয়েক  বছর  আমাদের  পিছিয়ে  যেতে  হবে।  দেবনাথ  পরিবারের  এক  সদস্য  অঙ্কিত  দেবনাথের  কাছ  থেকে  আমি  সেই  গল্প  জানতে  পারি।

            ২০১৮  তে  ঘটল  বিপত্তি।  তখন  এই  বাড়ির  জগন্নাথ  মূর্তি  ছিল  কৃষ্ণ  বর্ণের।  মূর্তি  ছিল  মৃন্ময়।  সে  বছর  রথের  সময়  অসাবধানতাবশত  সেই  মাটির  জগন্নাথ  মূর্তি  ক্ষতিগ্রস্ত  হল।  এই  ঘটনায়  দেবনাথ  পরিবারের  সকলে  শোকে  মুহ্যমান  হন  এবং  বিপদের  আশঙ্কায়  বিভিন্ন  পণ্ডিতদের  পরামর্শ  গ্রহণ  করেন।  পণ্ডিতদের  পরামর্শে  তাঁরা  ঠিক  করেন  জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার  দারুমূর্তি  স্থাপন  করবেন।  নবদ্বীপে  এক  দারু  ভাস্করকে  মূর্তি  নির্মাণের  ফরমাশ  দেওয়া হল।  মূর্তি  নির্মাণ  যখন  শেষ  হয়ে  এসেছে  তখন  অঙ্কিত  বাবুর  মা  এক  রাতে  স্বপ্নে  দেখলেন  যে  একটি  নীল  বর্ণের  বালক  তাঁর  দিকে  এগিয়ে  আসছে।  তাঁরা  ভাবলেন  যে  এই  স্বপ্নের  মধ্যেই  ভগবানের  নির্দেশ  রয়েছে।  তাই  ঠিক  হল  জগন্নাথের  রং  করা  হবে  নীল।  নবদ্বীপের  শ্রী  অর্ক  দাস  তিন  বিগ্রহের  অঙ্গরাগ  করলেন।  অপূর্ব  হল  সেই  তিন  বিগ্রহ।  বিশেষ  করে  জগন্নাথের  বিগ্রহ।  জগন্নাথের  সেই  নয়নাভিরাম  রূপ  দেখে  যেন  চোখ  ফেরানো  যায়  না।  

              এই  বাড়িতে  জগন্নাথকে  গোপাল  রূপে  সেবা  করা  হয়।  অঙ্কিত  বাবুর  মা  জগন্নাথকে  ছেলে  বলে  মনে  করেন।  তাই  জগন্নাথের  এই  রকম  মুখশ্রী।  এখানে  উল্লেখ্য,  দেবনাথ  বাড়ির  সুভদ্রার  বিগ্রহটিও  ব্যতিক্রমী।  এখানে  সুভদ্রার  ত্রিনেত্র  যা  অন্য  কোথাও  দেখা  যায়  না।  এটি  করা  হয়  অঙ্কিত  বাবুর  দিদিমার  কথা  মতো।  অঙ্কিত  বাবুর  মামার  বাড়ি  দক্ষিণেশ্বরে।  তাই  দক্ষিণেশ্বরের  মায়ের  রূপ  কল্পনা  করে  এখানে  সুভদ্রার  ত্রিনেত্র।

                এ  বাড়ির  জগন্নাথের  ভোগে  থাকে  ফ্যান-ভাত  ও  ডাল  সেদ্ধ। অঙ্কিত  বাবুর  মা  স্বপ্নে  যখন  জগন্নাথকে  দেখেন  তখন  তিনি  তাঁকে  জিজ্ঞাসা  করেন  "তুমি  যে  আমার  বাড়িতে  আসতে  চাইছো  তা  তোমাকে  আমি  কী  খেতে  দেবো ?  আমার  তো  সেরকম  সামর্থ  নেই।"  প্রত্যুত্তরে  প্রভু  বলেন,  "সামান্য  ফ্যান-ভাত  ও  ডাল  সেদ্ধতেই  আমি  তুষ্ট।"  তাই  প্রতিদিনের  জগন্নাথের  ভোগে  পোলাও,  পরমান্ন  ইত্যাদি  যা-ই  দেওয়া  হোক  না  কেন  সঙ্গে  ফ্যান  ভাত  ও  ডাল  সেদ্ধ  দেওয়া  হবেই।

            ২০০২  খ্রিষ্টাব্দে  এ  বাড়িতে  রথযাত্রা  শুরু  করেছিলেন  অঙ্কিত  বাবুর  ঠাকুরমা।  তখন  রথযাত্রা  হত  ছোটো  করে।  আগে  এঁরা  নয়াপট্টিতে  ভাড়া  থাকতেন।  এ  বাড়ির  সকলে  সেখানে  রথযাত্রা  দেখতে  যেতেন।  কোনো  কারণে  সে  বছর  সেখানে  রথযাত্রা  বন্ধ  থাকে।  তাই  অঙ্কিত  বাবুর  ঠাকুরমার  পরামর্শে  তাঁরা  এই  বাড়িতে  রথযাত্রা  শুরু  করেন।  আগেই  বলা  হয়েছে  যে  তখন  জগন্নাথ  ছিল  মাটির  তৈরি।  নিজের  বাড়িতে  রথযাত্রা  হলেও  তাঁরা  অন্য  আর  একটা  জায়গায়  রথযাত্রা  দেখতে  যেতেন।  ২০১২ -১৩  নাগাদ  সেখানে  রথে  আসীন  জগন্নাথকে  অঙ্কিত  বাবুর  মা  স্পর্শ  করতে  যান।  কিন্তু  কর্তৃপক্ষ  তাঁকে  জগন্নাথকে  স্পর্শ  করতে  বাধা  দেন।  তাঁদের  যুক্তি  ছিল,  মহিলারা  জগন্নাথকে  স্পর্শ  করতে  পারে  না।  এতে  বাড়ির  সকলে  মনঃক্ষুণ্ণ  হয়ে  বাড়ির  রথটিকে  বড়ো  করতে  মনস্ত  করেন।  শুরু  হয়  বড়ো  করে  রথযাত্রা।  এরপর  ২০১৮  তে  অঘটনের  কথা  আগেই  বলা  হয়েছে।  রথযাত্রা  চলতে  থাকে।  ২০২১  ও  '২২  দুবছর  করোনার  কারণে  রথযাত্রা  বন্ধ  থাকে।  ২০২৩ -এ  রথটা  নষ্ট  হওয়ার  কারণে  রথ  টানা  হয়  নি।  তবে  কোলে  করে  বিগ্রহকে  মাসির  বাড়ি  নিয়ে  যাওয়া  হয়।  এখানে  উল্লেখ্য,  এখানে  জগন্নাথের  মাসির  বাড়ি  কাছেই  ঝুলন  মন্দিরের  কাছে  অমিত  মণ্ডলের  বাড়ি।  কেবল  মাত্র  রথযাত্রা  নয়, সারা  বছর  দেবনাথ  বাড়িতে  জগন্নাথের  আরও  নানা  অনুষ্ঠানের  আয়োজন  করা  হয়।  সেই  সব  অনুষ্ঠানে  এবং  রথযাত্রায়  জাতি-ধৰ্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে  সকলে  অংশ  গ্রহণ  করেন।  খ্রিস্টান  পাড়ার  বেশির  ভাগ  খ্রিস্টান  পরিবারের  বাস।  তাঁদের  অনেকেই  এই  সব  অনুষ্ঠানে  এবং  রথযাত্রায়  আন্তরিক  ভাবে  অংশ  গ্রহণ  করে  থাকেন।

            দেবনাথ  বাড়িতে  দারু  নির্মিত  জগন্নাথ-বলরাম-বিগ্রহ  ছাড়াও  পিতলের  গোপাল,  পিতলের  গৌর-নিতাই  ও  অন্যান্য  বিগ্রহ  বর্তমান।  সমস্ত  বিগ্রহই  নিত্য  পূজিত।          

দারু নির্মিত বলরাম-সুভদ্রা-জগন্নাথ
নীল জগন্নাথ
বলরাম ও সুভদ্রা
গোপাল ও অন্যান্য বিগ্রহ

গৌর-নিতাই ও অন্যান্য বিগ্রহ

          কী  ভাবে  যাবেন ?

            কলকাতার  উল্টোডাঙ্গা  ব্রিজের  কাছ  থেকে  কেষ্টপুর  গামী  ১২সি / ২  বাসে  খ্রিস্টান  পাড়ায়  নেমে  দেবনাথ  বাড়ি  বা  নীল  জগন্নাথ  বাড়ি  যাওয়া  যায়।  উল্টোডাঙ্গা  ব্রিজের  কাছ  থেকে  বাগুইআটি  গামী  বাসে  কেষ্টপুরে  নেমে  সাবওয়ে  দিয়ে  রাস্তার  বিপরীত  দিকে  গিয়ে  অটোতে  খ্রিস্টান  পাড়ায়  যাওয়া  যায়।

                                          ********

রামায়ণের ৭টি খণ্ডের ৬৪ টি উপাখ্যান ও ১৮৫ টি টেরাকোটা ফলকের আলোকচিত্র সংবলিত আমার লেখা এবং 'রা প্রকাশন' কর্তৃক প্রকাশিত বই 'বাংলার টেরাকোটা মন্দিরে রামায়ণ' প্রকাশিত হয়েছে।


 বইটি ডাক যোগে সংগ্রহ করতে হলে যোগাযোগ করুন :  9038130757 এই নম্বরে। 

কলকাতার কলেজস্ট্রিটের মোড়ে দুই মোহিনীমোহন কাঞ্জিলালের কাপড়ের দোকানের মাঝের রাস্তা ১৫, শ্যামাচরণ দে স্ট্রিটের উপর অবস্থিত বিদ্যাসাগর টাওয়ারের দু'তলায় 'রা প্রকাশনে'র দোকান। ওখান থেকে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। কোনও অসুবিধা হলে উপরোক্ত নম্বরে ফোন করতে পারেন।

বৃহস্পতিবার, ৩১ আগস্ট, ২০২৩

Temple of Radha Gobinda Jiu, 142 Mahatma Gandhi Road, Burrabazar, Kolkata

 রাধা  গোবিন্দ  জিউর  মন্দির,  ১৪২  মহাত্মা  গান্ধী  রোড,  বড়বাজার,  কলকাতা

                         শ্যামল  কুমার  ঘোষ

            কলকাতার  বড়বাজারের  ফলপট্টির  কাছে  ১৪২,  মহাত্মা  গান্ধী  রোডে  বড়বাজারের  মল্লিক  পরিবারের  শ্রীশ্রী রাধা  গোবিন্দ  জিউর  মন্দির  অবস্থিত।

            সংক্ষিপ্ত  পরিচয় : বড়বাজারের  এই  মল্লিক  বংশের  রাজারামের  পুত্র  দর্পনারায়ণ  মুসলিম  শাসকের  ভয়ে  খুড়তুতো  ভাই  সুখরামকে  সঙ্গে  নিয়ে  হুগলির  ত্রিবেণী  থেকে  কলকাতায়  চলে  আসেন।  তাঁর  একমাত্র  পুত্র  নয়নচাঁদ।  নয়নচাঁদের  তিন  পুত্র :  গৌরচরণ,  নিমাইচরণ  ও  রাধাচরণ।  গৌরচরণের  চার  পুত্র :  বিশ্বম্ভর,  রামলোচন,  জগমোহন  ও  রূপলাল।  মধ্যম  পুত্র  রামলোচনের  স্ত্রী  চিত্রা  দাসী  এই  মন্দির  নির্মাণ  করেন।  তাঁদের  পুত্র  কাশীনাথ  মল্লিক।  নয়নচাঁদের  মধ্যম  পুত্র  নিমাইচরণ  বড়বাজারে  ১৭৩৬  খ্রিস্টাব্দে  জন্মগগ্রহণ  করেন।  তখন  বড়বাজারের  নাম  ছিল  কমল  নয়নের  বেড়।  এখানে  উল্লেখ্য,  নয়নচাঁদ  ১১৬২  বঙ্গাব্দে ( ১৭৫৫  খ্রিস্টাব্দে )  হুগলি  জেলার  মাহেশে  শ্রী  জগন্নাথ  দেবের  মন্দির  নির্মাণ  করেন  এবং  তাঁর  পুত্র  নিমাইচরণ  ১৮৩৭  খ্রিস্টাব্দে  বিগ্রহের  নিত্য  সেবার  ব্যবস্থা  করেন।  ১৪০৩  বঙ্গাব্দে ( ১৯৯৬  খ্রিস্টাব্দে )  নয়নচাঁদ  মল্লিকের  পৌত্র  রামমোহন  মল্লিকের  স্মৃতির  উদ্দেশ্যে  জগন্নাথ  মন্দিরের  সিংহদ্বার  সংস্কার  করেন  কাশীনাথ  মল্লিকের  সেই  সময়ের  বংশধরগণ।  নয়নচাঁদ  ও  তাঁর  পুত্র  গৌরচরণ  ১৭০৮  শকাব্দে ( ১৭৮৬  খ্রিস্টাব্দে )  নদিয়া  জেলার  কল্যাণীর  রথতলার  কাঞ্চনপল্লীতে  কৃষ্ণরাইয়ের  মন্দির  নির্মাণ  করেন।             

            রাস্তার  উপর  রয়েছে  দুটি  সিংহের  মূর্তি  যুক্ত  একটি  বড়  দ্বার।  দ্বারের  পাশে  একটি  শ্বেতপাথরের  ফলকে  লেখা  রয়েছে  যে  দ্বারটি  সকাল  ৭ টা  থেকে  রাত  ৯ টা  ৩০  মিনিট  পর্যন্ত  খোলা  থাকবে।  কিন্তু  বর্তমানে  এই  দ্বারটি  আর  খোলা  হয়  না।  তার  ডান  পাশে  রয়েছে  আর  একটি  ছোট  দ্বার।  এই  দ্বারটি  দিয়ে  প্রবেশ  করলে  দেখা  যাবে  বেশ  খানিকটা  ফাঁকা  জায়গা।  সেটা  পেরোলে  ডান  দিকে  দেখা  যাবে  একটি  দ্বার।  দ্বারের  মাথায়  আছে  মন্দিরের  প্রতিষ্ঠাফলক।  এই  দ্বার  দিয়ে  ঢুকলে  পড়বে  মন্দির  চত্বর।  মন্দির  চত্বরে  ঢুকলে  সামনে  চোখে  পড়বে  বড়  বড়  থামওয়ালা  ও  কড়ি-বরগাযুক্ত  বিশাল  নাটমন্দির।  তবে  নাটমন্দিরটি  বর্তমানে  জীর্ণ  হয়ে  পড়েছে।  নাটমন্দিরের  ছাদে  শালের  খুঁটি  দিয়ে  ঠেকনা  দেওয়া  হয়েছে।  নাটমন্দিরের  সামনে  মূল  মন্দির।  অল্প  উঁচু  ভিত্তিবেদির  উপর  স্থাপিত,  পশ্চিমমুখী  মন্দিরটি  দালান  শৈলীর।  গর্ভগৃহের  সামনে  একটি  বড়  অলিন্দ।  ঠাকুর  দালানটি  সুসংস্কৃত।  গর্ভগৃহ  ও  অলিন্দের  মেঝে  পাথরের।  গর্ভগৃহের  সামনে  তিনটি  কলাপসিবল  গেট।  বাঁ  দিকের  গেটের  সামনে  একটি  ধাতুময়  সিংহাসনের  উপর  শ্বেতপাথরের  বলরাম,  অষ্টধাতুর  রেবতী,  নারায়ণ ( শিলা )  ও  লক্ষ্মী ( কুনকে )  বিরাজমান।  মাঝের  গেটের  সামনে  আর  একটি  ধাতুময়  সিংহাসনের  উপর  অষ্টধাতুর  গোবিন্দ  ও  রাধিকা  বিগ্রহ  বিরাজমান।  সিংহাসনের  পায়াগুলোতে  নয়নাভিরাম  সিংহের  মাথা।  সিংহাসনের  নিচে  দুটি  শ্বেতপাথরের  গাই-বাছুরও  খুব  সুন্দর।  ডান  দিকের  গেটের  সামনে  রয়েছে  শ্রীশ্রী  সিংহবাহিনী  মাতার  ফটো।  এখানে  উল্লেখ্য,  এই   শ্রীশ্রী  সিংহবাহিনী  মা  মল্লিকদের  বিভিন্ন  শরিকদের  বাড়িতে  ঘুরে  ঘুরে  পূজিত  হন।  এই  মন্দিরেরও  তিনি  আসেন  পর্যায়ক্রমে।  তাই  অন্যত্র  তোলা  শ্রীশ্রী  সিংহবাহিনী  মাতার  ছবি  এখানে  যুক্ত  করলাম।  আরও  উল্লেখ্য,  ঠাকুর  রামকৃষ্ণ  শ্রীশ্রী  সিংহবাহিনী  মাকে  দেখতে  এই  বাড়িতে  এসেছিলেন।  মন্দির  চত্বরের  উঠানের  মাঝখানে  রয়েছে  একটি  গরুড়  মূর্তি।  এই  গরুড়  মূর্তির  সামনে,  নাটমন্দিরের  বিপরীত  দিকে  একটি  পৃথক  ঘরে  তিনটি  খাটের  একটির  উপর  আছেন  দারু  নির্মিত  জগন্নাথ,  নারায়ণ ( শিলা ),  লক্ষ্মী ( কুনকে ),  পিতলের  সরস্বতী  মূর্তি  ও  একটি  ছোটো  কষ্টিপাথরের  শিবলিঙ্গ।  দ্বিতীয়  খাঠের  উপর  আছেন  দারু  নির্মিত  জগন্নাথ  ও  একটি  কষ্টিপাথরের  রাধা-কৃষ্ণ।  তৃতীয়  খাঠের  উপর  আছেন  দারু  নির্মিত  কানাই-বলাই।  দণ্ডায়মান।  সকল  বিগ্রহের  নিত্য  পূজা  ছাড়াও  মন্দিরে  দোলযাত্রা,  স্নানযাত্রা, রথযাত্রা,  ঝুলন,  জন্মাষ্টমী  ইত্যাদি  অনুষ্ঠানে  বিশেষ  পূজা  অনুষ্ঠিত  হয়।  ইসকনের  প্রতিষ্ঠাতা  শ্রী শ্রী  প্রভুপাদ  ভক্তিবেদান্ত  স্বামী  ছেলেবেলায়  এই  মন্দিরের  কাছেই  থাকতেন  এবং  তখন  তিনি  প্রায়ই  এই  মন্দিরে  আসতেন।  তাই  মন্দিরের  সামনের  দেওয়ালে  তাঁর  একটি  ছবি  টাঙানো  আছে।  

            আগে  যে  প্রতিষ্ঠাফলকের  উল্লেখ  করা  হয়েছে  তা  থেকে  জানা  যায়,  রামলোচন  মল্লিকের  সহধর্মিনী  চিত্রা  দাসী  ১২২৮  বঙ্গাব্দের  ৩০ শে  মাঘ  ( ১৮২১  খ্রিস্টাব্দে )  এই  মন্দির  প্রতিষ্ঠা  করেন।  নাটমন্দিরের  গায়ে  লাগানো  একটি  সংস্কার  ফলক  থেকে  জানা  যায়,  ১৩৯৬  বঙ্গাব্দের  ২৫ শে  বৈশাখ  ( ১৯৮৯  খ্রিস্টাব্দে )  মন্দিরটির  সংস্কার  করা  হয়।

গোবিন্দ ও রাধিকা বিগ্রহ - ১

রাধাগোবিন্দ মন্দিরের প্রতিষ্ঠাফলক

গরুড় মূর্তি ও নাটমন্দির

মন্দিরের সংস্কারফলক

মন্দিরের সামনের  বিন্যাস

বলরাম, রেবতী, নারায়ণ শিলা ও লক্ষ্মী ( কুনকে )

বলরাম, রেবতী, নারায়ণ শিলা ও লক্ষ্মী ( কুনকে )

শ্বেতপাথরের বলরাম ও অষ্টধাতুর রেবতী

গোবিন্দ ও রাধিকা বিগ্রহ - ২

শ্বেতপাথরের গাই-বাছুর ও সিংহাসনের পায়া

গোবিন্দ ও রাধিকা বিগ্রহ - ৩

গোবিন্দ ও রাধিকা বিগ্রহ - ৪

মন্দিরের শ্রীশ্রী সিংহবাহিনী মাতার ছবি

অন্যত্র তোলা শ্রীশ্রী সিংহবাহিনী মাতা

জগন্নাথ, নারায়ণ শিলা ও লক্ষ্মী ( কুনকে ), সরস্বতী ও শিবলিঙ্গ

জগন্নাথ ও কষ্টিপাথরের রাধা-কৃষ্ণ

দারু নির্মিত কানাই-বলাই

মাহেশের মন্দিরের ফলক - ১

মাহেশের মন্দিরের ফলক - ২

কৃষ্ণরাই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাফলক

    সহায়ক  গ্রন্থ :

           ১)  কলকাতার  বাবু  বৃত্তান্ত :  মূল লেখক : লোকনাথ  ঘোষ ( অনুবাদক :  শুদ্ধধন  সেন )

  ----------------------------------------

রামায়ণের ৭টি খণ্ডের ৬৪ টি উপাখ্যান ও ১৮৫ টি টেরাকোটা ফলকের আলোকচিত্র সংবলিত আমার লেখা এবং 'রা প্রকাশন' কর্তৃক প্রকাশিত বই 'বাংলার টেরাকোটা মন্দিরে রামায়ণ' প্রকাশিত হয়েছে।


 বইটি ডাক যোগে সংগ্রহ করতে হলে যোগাযোগ করুন :  9038130757 এই নম্বরে। 

কলকাতার কলেজস্ট্রিটের মোড়ে দুই মোহিনীমোহন কাঞ্জিলালের কাপড়ের দোকানের মাঝের রাস্তা ১৫, শ্যামাচরণ দে স্ট্রিটের উপর অবস্থিত বিদ্যাসাগর টাওয়ারের দু'তলায় 'রা প্রকাশনে'র দোকান। ওখান থেকে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। কোনও অসুবিধা হলে উপরোক্ত নম্বরে ফোন করতে পারেন।

--------------------------------------------------------                    

মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট, ২০২৩

Dayamayi Durga Temple, Sitaram Ghosh Street, Kolkata

 দয়াময়ী দুর্গা মন্দির, সীতারাম ঘোষ স্ট্রিট,  কলকাতা 

                    শ্যামল কুমার ঘোষ

            মধ্য কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের কাছে ১৪, সীতারাম ঘোষ স্ট্রিটে দয়াময়ী দুর্গা মন্দির অবস্থিত। সাদামাটা মন্দির। দুটি বাড়ির মাঝখানে একটি একটি ছোটো দালান শৈলীর একতলা মন্দির। গর্ভগৃহের সামনে একটি ঢাকা অলিন্দ আছে। অলিন্দের সামনে একটি কলাপসিবল গেট। গর্ভগৃহে ঢোকার একটিই কাঠের দরজা। মন্দিরে পুরোহিত না থাকলে গর্ভগৃহের দরজা খোল  থাকে। কিন্তু কলাপসিবল গেট টানা থাকে যাতে জনসাধারণ বাইরে থেকে মাকে দর্শন করতে পারেন। পুরোহিত উপস্থিত থাকলে কলাপসিবল গেট খোলা থাকে। তখন যাঁরা পুজো দিতে ইচ্ছুক তাঁরা পূজা দিতে পারেন। তবে কাছাকাছি কোনো পুজোর সামগ্রীর দোকান নেই। পুজো দিতে হলে নিজেকেই সব কিছু নিয়ে যেতে হবে। সাধারণত সকাল ১০ টা পর্যন্ত মন্দিরে পুরোহিত উপস্থিত থাকেন।         

            গর্ভগৃহে শ্বেতপাথরের বেদির উপর কষ্টিপাথরের দয়াময়ী দুর্গা বিরাজিত। দয়াময়ী দুর্গা মূর্তি হল একক দশভুজা মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গামূর্তি। এখানে দুর্গার সঙ্গে তাঁর পুত্রকন্যারা অনুপস্থিত। দেবীর বাহন ঘোড়ামুখো সিংহ। শ্বেত বর্ণের। মহিষাসুরের বর্ণ সবুজ। মূর্তিটি মাঝে মাঝে অঙ্গরাগ করা হয়। গর্ভগৃহে দুর্গা মূর্তির সঙ্গে আছেন নারায়ণ শিলা এবং শিবলিঙ্গ।

            মন্দিরের সামনের উপরের প্রতিষ্ঠাফলক থেকে জানা যায়, মন্দিরটি ১২৫৭ বঙ্গাব্দে প্রতিষ্ঠা করেন শ্রী নীলকমল মিত্র দাস এবং মন্দিরটির সেবায়েত স্থানীয় ঘোষাল পরিবার। তবে জানা গেল যে বর্তমানে মন্দিরটি রক্ষণাবেক্ষন ও নিত্য পূজার দেখাশোনা করেন মন্দিরের পাশের দত্ত পরিবার। নিত্য পূজা ছাড়াও দুর্গা পূজার সময় বিগ্রহের বিশেষ পূজা অনুষ্ঠিত হয়।                    

দয়াময়ী দুর্গা - ১

দয়াময়ী দুর্গা মন্দির

প্রতিষ্ঠাফলক

প্রতিষ্ঠা ও অন্য একটি ফলক 

দয়াময়ী দুর্গা - ২

দয়াময়ী দুর্গা - ৩

            কী ভাবে যাবেন? 

            মহাত্মা গান্ধী রোড ও রাজা রামমোহন সরণির সংযোগস্থলের কাছে রাজা রামমোহন সরণি পোস্ট অফিস। এই পোস্ট অফিসের বিপরীত দিকের রাস্তার উপর একটি শিব মন্দির আছে। এই শিব মন্দিরের পাশের রাস্তার নাম সীতারাম ঘোষ স্ট্রিট। এই রাস্তা ধরে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে কাউকে জিজ্ঞাসা করলেই পেয়ে যাবেন মন্দির।  

                                         **********

রামায়ণের ৭টি খণ্ডের ৬৪ টি উপাখ্যান ও ১৮৫ টি টেরাকোটা ফলকের আলোকচিত্র সংবলিত আমার লেখা এবং 'রা প্রকাশন' কর্তৃক প্রকাশিত বই 'বাংলার টেরাকোটা মন্দিরে রামায়ণ' প্রকাশিত হয়েছে।


 বইটি ডাক যোগে সংগ্রহ করতে হলে যোগাযোগ করুন :  9038130757 এই নম্বরে। 

কলকাতার কলেজস্ট্রিটের মোড়ে দুই মোহিনীমোহন কাঞ্জিলালের কাপড়ের দোকানের মাঝের রাস্তা ১৫, শ্যামাচরণ দে স্ট্রিটের উপর অবস্থিত বিদ্যাসাগর টাওয়ারের দু'তলায় 'রা প্রকাশনে'র দোকান। ওখান থেকে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। কোনও অসুবিধা হলে উপরোক্ত নম্বরে ফোন করতে পারেন।
        

সোমবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৩

Radha Binod Kishore Jiu Temple, 43/3 Raja Rajballav Street, North kolkata

রাধা বিনোদ কিশোর জিউ মন্দির, ৪৩/৩  রাজা রাজবল্লভ স্ট্রিট, উত্তর কলকাতা

                          শ্যামল কুমার ঘোষ

            উত্তর কলকাতার ৪৩/৩, রাজা রাজবল্লভ স্ট্রিটে রাধা বিনোদ কিশোর জিউ মন্দিরটি অবস্থিত। উঁচু ভিত্তিবেদির উপর স্থাপিত, দক্ষিণমুখী মন্দিরটি দালান শৈলীর। গর্ভগৃহের সামনে অলিন্দ। অলিন্দটি ঢালাই গ্রিল ও কলাপসিবল গেট দিয়ে ঘেরা। মন্দিরের সামনে একটু জায়গা আছে। তাতে একটি সিংহের মূর্তি। গেট দিয়ে ঢুকলে সামনেই গর্ভগৃহ। গর্ভগৃহের সামনে একটি কলাপসিবল গেট। গর্ভগৃহে একটি কাঠের সিংহাসনে ধাতুময় বিনোদ কিশোর (কৃষ্ণ),  ধাতুময়ী রাধা, ধাতুময় গোপাল, দারু নির্মিত একক জগন্নাথ বিগ্রহ বিরাজমান। পাশের আর একটি সিংহাসনে আরও একটি রাধা-কৃষ্ণ বিগ্রহ বর্তমান। গর্ভগৃহের বাইরের দেওয়ালে শ্বেতপাথরের হনুমান মূর্তি আছে। মন্দিরের সমস্ত বিগ্রহই নিত্য পূজিত।          

          ১৩৪৬ বঙ্গাব্দের ১৭ই বৈশাখ সোমবার শুক্লা ত্রয়োদশী তিথিতে  ( ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১ লা মে ) মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠা করেন  শ্রীযুক্তেশ্বরী মাতা ঠাকুরাণী। মন্দিরের অলিন্দের বাইরের দিকের বাঁ  দিকে একটি শ্বেতপাথরের প্রতিষ্ঠাফলক লাগানো আছে। শ্রী শ্রী রাধা বিনোদ কিশোর জিউ ট্রাস্ট মন্দিরটি পরিচালনা করেন। 

রাধা বিনোদ কিশোর জিউ মন্দির
( পাশ থেকে তোলা )

রাধা বিনোদ কিশোর জিউ মন্দির
( সামনে থেকে তোলা )

গর্ভগৃহের সামনের বিন্যাস 

গর্ভগৃহের সকল বিগ্রহ 

একক জগন্নাথ 

গোপাল 

আর একটি রাধা-কৃষ্ণ বিগ্রহ 

হনুমান মূর্তি 

বিনোদ কিশোর ( কৃষ্ণ ) ও রাধিকা বিগ্রহ 

প্রতিষ্ঠাফলক 

           কী ভাবে যাবেন ?

            উত্তর কলকাতার শ্যামবাজারের পাঁচমাথার মোড়ে যে পাঁচটি রাস্তা এসে মিলিত হয়েছে তার একটি রাস্তার নাম ভূপেন্দ্র বসু এভেন্যুউ। এই রাস্তা ধরে এগুলে রাস্তাটি যেখানে যতীন্দ্র মোহন এভেন্যুয়ে মিশেছে সেখানে বিবেকানন্দের একটি মূর্তি আছে। এই  মূর্তির একটু আগে ভূপেন্দ্র বসু এভেন্যুয়ের বাঁ দিকে রাজা রাজবল্লভ স্ট্রিটের একটি কাটা অংশ আছে যা মূল রাজা রাজবল্লভ স্ট্রিট থেকে বিচ্ছিন্ন। এখানে কাউকে জিজ্ঞাসা করলেই ৪৩/৩, রাজা রাজবল্লভ স্ট্রিটে পেয়ে যাবেন কাঙ্খিত মন্দির।  

                                              *******

রামায়ণের ৭টি খণ্ডের ৬৪ টি উপাখ্যান ও ১৮৫ টি টেরাকোটা ফলকের আলোকচিত্র সংবলিত আমার লেখা এবং 'রা প্রকাশন' কর্তৃক প্রকাশিত বই 'বাংলার টেরাকোটা মন্দিরে রামায়ণ' প্রকাশিত হয়েছে।


 বইটি ডাক যোগে সংগ্রহ করতে হলে যোগাযোগ করুন :  9038130757 এই নম্বরে। 

কলকাতার কলেজস্ট্রিটের মোড়ে দুই মোহিনীমোহন কাঞ্জিলালের কাপড়ের দোকানের মাঝের রাস্তা ১৫, শ্যামাচরণ দে স্ট্রিটের উপর অবস্থিত বিদ্যাসাগর টাওয়ারের দু'তলায় 'রা প্রকাশনে'র দোকান। ওখান থেকে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। কোনও অসুবিধা হলে উপরোক্ত নম্বরে ফোন করতে পারেন।